দেশের সবচেয়ে বড় উল্টো রথযাত্রায় জঙ্গি হামলার ছক
আনোয়ারুল করিম : প্রায় চারশত বছরের পুরনো এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রী শ্রী যশোমাধবের উল্টো রথযাত্রায় এবার জঙ্গি হামলার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে উল্টো রথযাত্রায় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার ওই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার সূচি নির্ধারিত রয়েছে। এদিকে এতিহ্যবাহী এই রথযাত্রায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্ল�ান হয়ে গেছে। সেখানকার সবধরনের দোকানপাট ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম বলেন, ‘উল্টো রথযাত্রায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। কোথায়, কীভাবে এই হামলার তৎপরতা চালানো হচ্ছে, তার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেই হামলা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর এ কারণেই মেলার দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সোমবার উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের সুইসাইডাল স্কোয়াড বাহিনীর সদস্যরা হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। ওই স্কোয়াডের সদস্যরা যেকোনো স্থান থেকে হামলা করবে- এমন একটি পরিকল্পনার চিত্র বা তথ্য সিটি এসবির কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে ধামরাই থানার ওসি রেজাউল হক দিপু বলেন, যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামির প্রাক্তন আমির সহ ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধবের উল্টো রথযাত্রায় জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ধামরাইয়ের গোটা অঞ্চলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেকোনো মূল্যে উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রবিবার থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ধামরাই বাজারের অলিগলিতে। মেলা সংলগ্ন বাসাবাড়িতে চলছে অভিযান। হামলাকারী সন্দেহে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আশে পাশের দোকানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া, মেলায় আগত দর্শনার্থীদেরও গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে ধামরাই রথমেলা প্রাঙ্গণ।
প্রসঙ্গত, গত ২৫জুন রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে প্রধান অতিথি করেছিলেন রথযাত্রা পরিচালনা পরিষদ। কিন্তু তিনি আসেননি। স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ মালেক শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে এবং মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জলন করে যশোমাধব মন্দিরের পুরোহিত উত্তম কুমার গাঙ্গুলীর হাতে প্রতীকী রশি তুলে দিয়ে সেদিনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
প্রায় চারশত বছর ধরে চলে আসছে ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসব। প্রতি বছরের আষাঢ় মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এ রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। যশোমাধবকে রথের প্রকোষ্ঠে উঠিয়ে ভক্তরা রথকে টেনে নেয় যাত্রাবাড়ীর কথিত শ্বশুড়ালয়ে। সেখানে নয়দিন অবস্থান করার পর যশোমাধবকে পুনরায় রথের প্রকোষ্ঠে উঠিয়ে নেওয়া হয় পৌরসভার কায়েতপাড়ায় অবস্থিত যশোমাধব মন্দিরে। এটাকে বলা হয় উল্টোরথযাত্রা বা উল্টোরথটান। আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে উল্টোরথযাত্রা বা উল্টোরথটান। উৎসবের দিন প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এ রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় এক মাস ব্যাপী চলে রথমেলা।