ভ্যাটিকানের যৌন কেলেঙ্কারি প্রশ্নে পোপ ফ্রান্সিসের একচোখা নীতি ফাঁস
মুজতাহিদ ফারুকী : পোপ ফ্রান্সিস ক্ষমতায় এসেছিলেন শুধু ভ্যাটিকানের শক্তিশালী আমলাতন্ত্র পরিষ্কার করে চার্চকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করে তোলার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়েই নয় বরং সেখানে শিশুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি বন্ধেরও অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।
ফ্রান্সিসের আগের দুজন পোপের আমলে ভ্যাটিকানের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। সে কারণে ২০১৩ সালে ফ্রান্সিসের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। ফ্রান্সিস শিশুদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষায় ক্ষমতাধর কমিটি গঠন, দোষী পাদ্রীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং অপরাধী পাদ্রীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার কোনো কথাই কার্যকর হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, পোপ ফ্রান্সিস কার্ডিনাল জর্জ পেলকে ছুটি মঞ্জুর করেছেন। জর্জ পেল হলেন যৌন অপরাধের দায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের রোমান ক্যাথলিক যাজক। অস্ট্রেলিয়ায় জর্জ পেল-এর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের কানাঘুষা থাকলেও ফ্রান্সিস তাকে নিজের অভ্যন্তরীণ মহলের ভেতরে নিয়ে আসেন।
জর্জ পেল বলেছেন, তিনি নির্দোষ এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন। তিনি ছুটি মঞ্জুরের জন্য পোপকে ধন্যবাদও জানান।
পোপ ফ্রান্সিস-এর সমস্ত ভালো কাজ, তার সদিচ্ছা ও জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও হতাশ সমালোচকরা দেখতে পেলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বিশ্বশান্তি পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে যিনি সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন সেই পোপেরও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তার উচ্চ পর্যায়ের যাজকদের যৌন কেলেঙ্কারির বিষয়ে।
ইতালীয় সাংবাদিক এবং গির্জার যৌন কেলেঙ্কারি বিষয়ে লেখা ‘কামলালসা’ নামের একটি গ্রন্থের লেখক এমিলিয়ানো ফিটিপালডি বলেন, “আজ যা ঘটলো তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যাজকদের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ যখন আসে তখন গির্জায় বিপ্লব ঘটানোর ফ্রান্সিসের বক্তব্য কেবলই কথার কথা, কাজের কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘মুখে বললেও যাজকদের যৌন কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফ্রান্সিসের অগ্রাধিকারের বিষয় নয়।’
অনেকে অভিযোগ করেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় শিশুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ সম্পর্কে দেশটির রয়েল কমিশন যখন তদন্ত শুরু করার কথা ঘোষণা করে তখন জর্জ পেলকে উদ্ধার করতেই পোপ ফ্রান্সিস তাকে ২০১৪ সালে রোমে নিয়ে আসেন। ফ্রান্সিস প্রথমে পেলকে তার সচিবালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়াবলী দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। পেল স্বীকার করেছেন যে, ভ্যাটিকানের আর্থিক হিসাবে কোটি কোটি ইউরো নয়-ছয় হয়েছে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
পরে পোপ ফ্রান্সিস পেলকে ভ্যাটিকানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থা কাউন্সিল অব কার্ডিনালস-এর সদস্য করেন।
মেলবোর্ন ও সিডনিতে আর্চ বিশপ থাকাকালে পেল যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত যাজকদের অপসারণ করতে নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছেন। অস্ট্রেলীয় রয়েল কমিশন চার হাজারের বেশি মানুষের খোঁজ পেয়েছে যারা অভিযোগ করেছেন যে, শৈশবে তারা গির্জায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
পেল-এর এসব বিষয় নিয়ে পোপ ফ্রান্সিস যদি হতাশাগ্রস্ত হয়েও থাকেন তার কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ নেই।
কার্ডিনাল পেল নিজেই যৌন কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বলে যখন অভিযোগ উঠতে শুরু করে এবং ২০১৬ সালে তিনি যখন রোম থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অস্ট্রেলীয় রয়েল কাউন্সিলের কাছে ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষ্য দেন তখন তিনি বারবার একটি বিষয়ে জোর দিচ্ছিলেন যে, তার প্রতি পোপের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।