উত্তরায় সি-শেল হোটেলসহ আগুনে পুড়ল তিন ভবন, নিহত ২ ও ৩ বিদেশি উদ্ধার
মাসুদ আলম ও শাকিল আহমেদ : রাজধানীর উত্তরায় পাশাপাশি তিনটি বাণিজিক ভবন ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি আবাসিক হোটেল থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের নাম রাসেল মিয়া (৩৫)। তার সঙ্গে থাকা নারীর নাম সাবিনা বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার ভোরে উত্তরা রাজলক্ষ্মী ভবনের বিপরীত পাশে ৪ নম্বর সেক্টরে চারতলা সি-শেল রেস্তোরাঁ থেকে আগুন লাগে। পরে পাশের পরিমনি ম্যানশন ও একে টাওয়ারে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছে এবং ৩ বিদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে দুপুর পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে রেস্তোরাঁর গ্যাস লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে আগুনের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধণকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোর ৫টার দিকে সি-শেল চারতলা ভবনের নিচতলার রেস্তোরাঁ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটিতে ছিল সি-শেলের পার্টি সেন্টার। এসময় ওই এলাকায় টহল পুলিশ আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুনে পুরো ভবনটি পুড়ে গেছে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সি-শেলের উত্তরের ৬ষ্ঠ তলা পরিমনি ম্যানশনে। ওই ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও ৫ম তলা ছিল সি-শেলের আবাসিক হোটেল ও ষষ্ঠ তলায় ছিল সি-শেলের পার্টি সেন্টার। ভবনটির নিচতলায় রয়েছে একুশে সুইটস অ্যান্ড বেকারি এবং রহিম আফরোজের একটি আউটলেট আর দোতলায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের কার্যালয়। তবে ব্যাংকের তেমন ক্ষতি হয়নি। ওই ভবনটির ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। নিহত রাসেল মিয়া প্রাণ আরএফএল গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার ছিলেন। তিনি চাঁদপুরের হাইমচড়ের নূর মোহাম্মদের ছেলে। ঢাকায় পল্লবী এলাকায় থাকতেন। ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার করা নারীর নাম সাবিনা বলে জানা গেছে। হোটেলটিতে তারা গেস্ট হিসাবে উঠেছিল। কিন্তু হোটেলের নিবন্ধন খাতায় তাদের নাম এন্ট্রি নেই। তিন বিদেশি নাগরিক উদ্ধার করা হয়। সি-শেলের দক্ষিণ দিকের এ কে টাওয়ারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনে ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও ৫ম তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সি-শেল রেস্তোরাঁর মালিক আমানউল্লাহ আমান নামের এক ব্যবসায়ী। তবে ছয়তলা ওই ভবনের মালিক উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হানিফ।
আবু হানিফের স্ত্রী ইসমে আরা হানিফ বলেন, আমাদের চারতলা থেকে ছয়তলা ভাড়া দিয়েছি আমানুল্লাহ আমানের কাছে। তিনিই হোটেল চালাচ্ছিলেন। আমাদের ভবনে অগ্নিনির্বাপনের সব ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ভবনে আমাদের কোনো কর্মচারী ছিল না।
ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, সোমবার ভোর ৫টার দিকে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে সি-শেল রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। পরে আগুন পাশের দুটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। চার ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, সি-শেল রেস্তোরাঁয় গ্যাসপাইপ লাইন থেকে আগুন লাগতে পারে। সি-শেল রেস্তোরাঁ, পাশের একুশে রেস্তোরাঁ ও পার্টি সেন্টার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত ডেকোরেশন ও ফলস সিলিং থাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
উত্তরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সি-শেল হোটেলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। ফায়ার সার্ভিস দুই মাস আগে হোটেল কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি অগ্নিনির্বাপণের নিজস্ব ব্যবস্থা রাখতে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তা করেনি। নোটিসের জবাবও দেয়নি। একটি ভবনের সঙ্গে দুই থেকে তিনটি ভবন সংযুক্ত। এ কারণে আগুন পাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।
সি-শেল হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. সোহেল বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নোটিস আমরা পাইনি। তবে আমরা প্রতিটি কক্ষে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রেখেছিলাম। তিনি অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিস দেরিতে এসেছে। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। যে কয়টা ইউনিট এসেছিল তাতে পানি কম ছিল। আগুন লাগার পর হোটেলের রুমে রুমে গিয়ে দরজা নক করা হয়। কিন্তু নিহত দুইজন ডাকে সাড়া দেয়নি। ৩ বিদেশিকে উদ্ধার করা হয়। ওই হোটেলে ৩১টি রুম রয়েছে। ঘটনার দিন ৪টি রুমে গেস্ট ছিলো। বাকি রুমগুলো ফাঁকা ছিল।
উত্তরা পূর্ব থানার এসআই সুমন শিকদার জানান, রাতে তার ওই এলাকায় ডিউটি ছিল। আগুন লাগার খবর জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে খবর দেন। নিহতদের মধ্যে একজনের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরিচয় তারা জানতে পেরেছেন। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ