কমিশনের সংলাপ উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব
আবু সাঈদ খান
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে সংলাপ তো হতেই পারে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি এলাকা, নির্বাচনি আচরণবিধি কি হওয়া উচিত এ ব্যাপারে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের মতামত তো নিতেই পারে। তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকার কিভাবে, কি ধরনের হবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকার এবং বিরোধী পক্ষ যদি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারে তাহলে সংলাপ সফল হবে না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাদের ঐকমত্য সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচন কমিশন তার কার্যক্রম বন্ধ রাখবে। সেটা তো ঠিক না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি সীমানা চিহ্নিতকরণ বা নির্ধারণ নিয়ে একটু সমস্যায় আছে। কেননা অনেক জায়গা দেখা যায় ১ লাখ ভোটার, আবার অনেক জায়গা দেখা যায় ৩ লাখ ভোটার। ভোটারের ব্যবধানটা একটু কাছাকাছি আসা দরকার। নির্বাচনে ভোটারের যে বড় ধরনের ফারাক তা যেন না থাকে। এ সমন্বয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা বিষয়। এর বাইরে আরও কতগুলো ব্যাপার আছে, যেমন এবার তো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি কার্যকর হবে না। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন একমত হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে। যেমন এর আগে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়নের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার তখন সেনাবাহিনী মোতায়নে রাজি হয়নি। এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে জনমত গঠন করতে হবে। আবার সরকারের দাবির বিষয়গুলোও আলোচনায় আসা উচিত। সামগ্রিকভাবে নাগরিক সমাজের মতামতগুলোও অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের গ্রহণ করা উচিত। সেই জায়গা থেকে নির্বাচন কমিশন তার কার্যক্রম শুরু করতে পারে এবং এটা খুবই সাধুবাদযোগ্য।
অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে যেগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম আছে, কিন্তু নিবন্ধন নেই। তাদের নিবন্ধন আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবা উচিত। আমি দেখেছি সব মিলিয়ে দশটা এজেন্ডা আছে যা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। আমার মনে হয়, আলোচানার মধ্যদিয়েই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা বেরিয়ে আসবে। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা গুরুত্বের শীর্ষে থাকা উচিত। আজকে এলাকা ভিত্তিক যে নির্বাচনি পদ্ধতি। অর্থাৎ এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি হওয়া কতটুকু যৌক্তিক। এমনও দেখা যায় যে একটা দল ১০ লাখ ভোট পেয়েছে কিন্তু তার প্রতিনিধি নেই। সেখানে ওই নির্বাচন সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টা।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা উচিত। প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি, তাদের উচিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ বর্জন করাটা সঠিক হবে না। আমি কোথায় যেন দেখলাম, বিএনপি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাচ্ছে আগে। সেটা হওয়া নিশ্চয় জরুরি কিন্তু এর মানে এই নয় যে, অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা কী হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে। নির্বাচন কমিশনের আরও বিধিবিধান সংযোজন করা দরকার কিনা। যেগুলো পার্লামেন্টে পাস করা লাগে না। নির্বাচন কমিশনই সেসব বিধি তৈরি করতে পারে। এই ধরনের বিধি তৈরি করার ব্যাপারে কমিশনের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। যদি কোনো আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় সেটাও নির্বাচন কমিশনের আলোচনার টেবিলে উঠে আসতে পারে।
পরিচিত: সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান