শাওয়াল মাসের ফজিলত
া মাহফুয আহমদ
আমরা এখন শাওয়াল মাস অতিবাহিত করছি। শাওয়াল ইসলামি ক্যালেন্ডারের দশম মাস। এই মাসের কিছু বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য রয়েছে। প্রাক-ইসলামি যুগে এই মাসকে অকল্যাণ ও কুলক্ষণের মাস বলে মনে করা হত। এমনকি এই মাসে লোকেরা বিয়ে-শাদী করা থেকে এবং সন্তানাদি বিবাহ দেয়া থেকে বিরত থাকত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই মাসে যে বিয়ে হবে তাতে কোনো কল্যাণ ও মঙ্গল থাকবে না। আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলাম এসে যেভাবে আরও অনেক কুসংস্কার দূর করেছে, মানুষের ভুল বিশ্বাসের সংশোধন করেছে এবং বহু কুপ্রথার সংস্কার সাধন করেছে, তেমনি শাওয়াল মাসের ব্যাপারে লোকদের অহেতুক এই ধারণারও খ-ন করেছে। ইসলাম বরং বিভিন্ন উপায়ে এই মাসকে মহিমান্বিত করে দিয়েছে, এ মাসের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে এবং মাসটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এখানে কয়েকটি উপায়ের কথা উল্লেখ করা হলো। এক. যেহেতু লোকেরা এই মাসে বিয়ে-শাদী করতে ভয় পেত এবং কুলক্ষণ ও অমঙ্গলের কারণ বলে মনে করত, সেজন্য আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এই মাসে বিয়ে করে সেই ভুল বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলেন। হজরত আয়িশা রাযি. কে তিনি শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেন। অথচ তাঁদের বৈবাহিক জীবন ছিল কত বরকতময়, শান্তিময় এবং ভালোবাসাপূর্ণ। হজরত আয়িশা নিজে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিয়ে করেন শাওয়াল মাসে এবং শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়। তাঁর কোন স্ত্রী তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবতী ছিলেন? আর আয়িশা রাযি. শাওয়ালে তাঁর (সম্পর্কীয়) মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৪২৩)
দুই. এই মাসের প্রথম দিনকে ইসলামি শরিয়ত ঈদুল ফিতরের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছে। অন্যকথায় এই দিনকে ইসলাম খুশি ও আনন্দ তথা কল্যাণ ও মঙ্গলের দিন আখ্যায়িত করেছে। এই দিন আমরা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ শোকর ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি যে, তিনি আমাদের ওপর বিশেষ করুণা করেছেন এবং আমাদেরকে রমজানের পুরো একটি মাস রোজা রাখার তাওফিক দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ১৮৫)
তিন. শাওয়াল হলো ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ হজ্জ পালনের মাসসমূহের একটি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত।’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ১৯৭) সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতে উদ্ধৃত সুবিদিত মাসগুলোর ব্যাখা দিয়েছেন এভাবে যে, শাওয়াল, যুল কা’দা এবং যুল হাজ্জা’র প্রথম দশদিন। (সহিহ বোখারি: ১৪৮৫) তাহলে ইসলাম শাওয়ালকে হজ্জের মাসসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে তার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে এবং প্রকারান্তরে প্রাক-ইসলামি যুগের সেই বাতিল ধারণার খ-ন করেছে। চার. রমজান ব্যতীত ইসলামি ক্যালেন্ডারে শাওয়ালই একমাত্র মাস; যেখানে রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং সেই রোজার অসাধারণ সওয়াবের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, তারপর এরসঙ্গে শাওয়ালেও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পুরো বৎসর রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৪) তাহলে রমজানের সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোজা রাখতে নবীজি স্বীয় উম্মতকে উৎসাহিত করলেন এবং এটাকে পুরো বৎসর রোজা রাখার সওয়াবের সঙ্গে তুলনা করলেন। সুবহানাল্লাহ! অতএব এই মহান প্রতিদান গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত থাকা কোনোভাবেই আমাদের জন্য সমীচিন নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।