জিজ্ঞাসাবাদ-সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে এগোচ্ছে তদন্ত
বিপ্লব বিশ্বাস : সেন্ট্রাল হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট এর সূত্র ধরে ফরহাদ মজহারের অপহরণ রহস্য অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গতকাল পুলিশ তার পরিবারে দুই সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করেছেন, তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তার মোবাইল ফোনে কোনো ফোন এসেছিল কিনা? এ ব্যাপারে পরিবারের কেউ কিছু জানেন কিনা? এছাড়া হঠাৎ স্বেচ্ছায় কেন বাসা থেকে বের হলেন এ তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আরো বেশ কিছুদিক জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এছাড়া নিখোঁজ হওয়ার পরের ১৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত তথ্য জানারও চেষ্টা চালাচ্ছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। সরেজমিন দেখা গেছে, ফরহাদ মজহারের শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে ১০০ গজেরও কম দূরত্বে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। হাসপতালের নিচেই রয়েছে ফার্মেসি। এটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে গত ৩ জুলাই সোমবার ভোর ৫টা ৫ মিনিটে বের হয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার। এরপর ৫টা ২৯ মিনিটে স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘ফরিদা, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ পরে রাত সাড়ে ১১টায় যশোরের নোয়াপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে আদাবর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ফরহাদ মজহার আদালতকে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, প্রতিদিনের মতো রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ঘুম থেকে জেগে উঠি। ভোর ৫টা পর্যন্ত কম্পিউটারে কাজ করি। এরপর চোখের ড্রপ নিতে ও হাঁটাহাঁটির জন্য বাসা থেকে বের হই। পাশেই সেন্ট্রাল হাসপাতাল। ওখানে যাওয়ার আগেই ৩ জন লোক ধাক্কা দিয়ে আমাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তা খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা নিয়েছেন বলে সেন্ট্রাল হাসপাতালটির হেল্প ডেস্কে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী জানান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিনই পুলিশ ও র্যাব আমাদের ফুটেজ নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এখন আর ওই সময়ের ফুটেজ নেই।’
এদিকে গত ২ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৩ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের ফার্মেসিতে দায়িত্বে ছিলেন সেল্সম্যান আল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমি ওইদিন ডিউটিতে ছিলাম। কিন্তু আমার দায়িত্ব চলাকালীন সময়ে এমন কেউ এসেছিলেন বলে মনে হচ্ছে না। আর এর আগে আমি উনাকে চিনতামও না। অপহরণের পর মিডিয়াতে দেখেছি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ফরহাদ মজহারের এই ঘটনার সবগুলো দিক খতিয়ে দেখছি আমরা। কেন ওইদিন তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কিভাবে খুলনা নেওয়া হল এবং কিভাবে তিনি ছাড়া পেলেন, সবগুলো দিকই আমরা তদন্ত করবো। খুব শিগগির এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ