হরি ধানের জনক হরিপদ কাপালি আর নেই
সুলতান আল একরাম, ঝিনাইদহ : হরিধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী আর নেই। ঝিনাইদহের এই মডেল কৃষক বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে সদর উপজেলার আসাননগর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সাধুহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন, মিডিয়াকর্মী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে যান বাড়িতে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলীয়ারপুর শ্মশানে তার অন্ত্যষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
হরিপদদের পালিত পুত্র রুপ কুমার জানান, তার বাবা ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরপরই তিনি তার বাবা কুঞ্জু লাল কাপালী ও মা সরোধনীকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন। কিশোর হরিপদ পরের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যুবক বয়সে তার পঙ্গু শ্বশুর একমাত্র মেয়ে সুনিতীকে বিয়ে দিয়ে আসাননগর গ্রামে ঘরজামাই রাখেন। মৃত্যুর আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৃষক হরিপদ এই ধান উদ্ভাবনের বিষয়ে জানিয়েছিলেন, তার ইরি ধান ক্ষেতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধান গাছ দেখে তিনি সেটাকে আলাদা করে রাখেন। এরপর বীজ সংগ্রহ করে তিনি নিজের ক্ষেতেই ১৯৯২ সালে আবাদ করে সুফল পান। এরপর এই ধানের আবাদ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার কৃষকরা বীজ সংগ্রহ করে ইরি ও বোরো মৌসুমে আবাদ করতে থাকেন। এই ধান উদ্ভাবনের ফলে হরিপদকে সম্মানের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি সংগঠন তাকে সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করেন। নবম ও দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষার বইতে হরিপদ কাপালীর নাম উঠে আসে।
ঝিনাইদহ কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের দিকে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নাম পরিচয়বিহীন এক জাতের ধানের ব্যাপক আবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে ঝিনাইদহের সাংবাদিকরা এই ধান চাষের উপর আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। পোকামাকড়, ক্ষরা ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষ ধরনের এই জাতের ধান চাষের উপর ছাড়পত্র প্রদান করে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান