দেশের ৩ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
মাসুদ রানা : অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের ৩ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে চরম দুরবস্থায় পড়েছে ৩ জেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ। এদিকে বন্যার পানিতে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত, পাট ক্ষেত ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেক জায়গায়।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত ৪ দিনের বর্ষণের কারণে গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, করতোয়া এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাঁধের ১৫টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপ বাড়লেই বাঁধের ওই অংশগুলো ছিঁড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
জামালপুর প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ঝোকন জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা পানি বন্যায় রূপ নিয়েছে। বন্যার পানিতে মেরুরচর ইউনিয়নের মাইছানির চরগ্রাম, মাদারের চর, উজান কলকিহারা, ভাটি কলকিহারা, ঘুঘরাকান্দি, শেকেরচর, বেতমারী, আউলপাড়া, বাগাডুবি, চরআইরমারী গ্রাম, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিলেরপাড়, বালুগাঁও, শেকপাড়া, মদনের চর, চরগাজীরপাড়া, কতুবের চর, পশ্চিম কামালের বার্তী, উত্তর আচ্চাকান্দি ও আইরমারী গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেত, পাট ক্ষেত ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু হাসান সিদ্দিক জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনও কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। তবে বন্যার্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলায় বন্যায় ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বগুড়া প্রতিনিধি প্রবীর মোহন্ত জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত ১২ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে এ দুই উপজেলার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে পানিবৃদ্ধি, পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ জানান, গত ১২ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৭টা নাগাদ এ দুই উপজেলার ধুনটের সহড়াবাড়ীঘাট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ