মেধাবী ছাত্র হাসান যেভাবে শীর্ষ জঙ্গি মাহফুজ!
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া : প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষায় ১ম ছাড়া কখনও দ্বিতীয় হয়নি। ৫ম শ্রেণীতে পেয়েছে বৃত্তি। পাবনা জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ১০ জনের একজন সে। যার কথা বলা হচ্ছে সে ঢাকার গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সদ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার উত্তরাঞ্চলীয় জেএমবির কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ।
পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খাতায় তার নাম সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ হলেও আসলে এটা তার নাম নয়। এই নামে এলাকার লোকজন কেউ তাকে চেনে না। প্রকৃত নাম আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসান। পরিবারের সদস্যরা হাসান নাম রাখলেও স্কুল শিক্ষকরা ভর্তির সময় নাম রাখেন আব্দুর সবুর খান।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা ও গড়াই নদীবেষ্টিত চর সাদিপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চর সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক রেজাউল করিম ওরফে রাজেম শেখের দশ ছেলেমেয়ের মধ্যে হাসান ৪র্থ। সবার ছোট ভাই হাফিজুর রহমান সাকিবও (২৫) একজন জঙ্গি। দুই ভাইয়ের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ২০১০ সালে সাকিব সাদিপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছর র্যাব-পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাকিবকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। অন্য তিন ভাই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করেন। বড় ভাই নজরুল ইসলামের এলাকায় চায়ের দোকান রয়েছে। আরেক ভাই মনিরুল ইসলাম একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন এবং আরেক ভাই হেলাল কুমিল্লায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।
হাসানের বোন রহিমা বেগম জানান, আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিল। স্কুলের পরীক্ষায় কোনোদিন সে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। ৫ম শ্রেণীতে সে বৃত্তি পেল। নিজের পড়াশোনার খরচ সে নিজেই চালাতো। প্রতিদিন বাড়ি থেকে পাবনায় নদী পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করত। হাসান যে জঙ্গি এটা তারা প্রথম জানতে পারেন ২০০৫ সালে যখন র্যাব-পুলিশ তাকে খুঁজতে বাড়িতে আসে। তখন তার ভাই পাবনা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। র্যাব-পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালানোর পর থেকেই সে বাড়িছাড়া হয়। এসময় মোবাইল ফোনে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ২০০৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে শেষবারের মতো সে বাড়িতে এসেছিল। এর পর থেকে আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থেকে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ নব্য জেএমবির ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন মাহফুজ। ২০০৬ সালে সে ভারতে পালিয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সে জেএমবির ভারতীয় শাখার আমির ছিল। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ভারত সরকার তাকে ধরতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৪ সালে সে ফের ঢাকায় ফিরে আসে। এর পর পুরনো জেএমবি ছেড়ে যোগ দেয় নব্য জেএমবিতে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী