মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় হানাহানি নয় যারা করবেন তারা পাবেন না : কাদের
আল হেলাল শুভ ও যশোর থেকে জাহিদুল কবীর মিল্টন : আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দলে বিভক্তি সৃষ্টি না করতে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যাদের ইমেজ ড্যামেজ হয়ে গেছে, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই তারা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি জরিপ করাচ্ছেন। এর মাধ্যমে গ্রহনযোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু এই মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতায় যেন ঘরের মধ্যে ঘর তৈরি না করে। যেন হানাহানি, রক্তারক্তি না হয়। যারা এ কাজ করবেন, তারা মনোনয়ন পাবেন না। গতকাল সোমবার দুপুরে যশোর ঈদগাহ ময়দানে যশোর জেলা ছাত্রলীগের ১৭তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের পর দ্রুত কমিটি দেওয়ার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কমিটি বিলম্বিত হলে অযোগ্যরা স্থান পেয়ে যায়। এজন্য যশোরের কমিটি যশোর থেকেই ঘোষণা করতে হবে। কমিটি ঢাকায় নেওয়া হলে অযোগ্যরা কমিটিতে স্থান পেয়ে যায়। কমিটি ঢাকায় গেলে ঘাটে ঘাটে অন্ধকারের খেলা হয়। নানা লবিয়িং হয়, কেন্দ্রীয় নেতারা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। অনিয়মিত-অছাত্র ও মাদকাসক্তরা ছাত্রলীগের কমিটিতে যেন স্থান না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে তাগাদা দেন তিনি।
নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব এখন শুধু কাঁদেন। আমি বলি আপনারা তো ভালো আছেন। ২০০১ ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মী গুম, খুন হয়েছিল সেটা কি ভুলে গেছেন? বিএনপির আমলে বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়েছিল, অশ্রু দরিয়া গিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কাদের বলেন, আপনারা কাঁদছেন, আমাদের কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ফখরুল সাহেব ২০০১-২০০৫ সাল আর আজকের অবস্থা মিলিয়ে নিন। সেইদিন ছিল আমাদের কান্না। আর আজ আপনারা মায়াকান্না করছেন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনার ওপর চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে, আহত হননি। আমাদের সেদিন রাজপথে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ঈশ্বরদীতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির ঈদের পরের আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৮ বছরে বিএনপি ৮ দিনও রাজপথে নামতে পারেনি। তারা বলে, ঈদের পর মাঠে নামবে। গত ৮ বছরে ১৭টা ঈদ চলে গেছে, কিন্তু মরা গাঙ্গে কি জোয়ার এসেছে? এই ঈদের পরও ১৪ দিন চলে গেছে। তারা বলে, এই দিন না ওই দিন, এই বছর না ওই বছর, এই ঈদ না ওই ঈদের পর আন্দোলন হবে। কিন্তু সব আষাঢ়ের তর্জন গর্জনের মতোই।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১০ সালের ১৪ মার্চ। সেদিন ছাত্রলীগের পদ নিয়ে সম্মেলনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। ফলে কমিটি ঘোষণা ছাড়াই পুঙ্গ হয়ে যায় সম্মেলন। পরদিন সংগঠনের প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে খুন হন তখনকার সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন ওরফে দাদা রিপন। অসমাপ্ত সম্মেলনের এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০১১ সালের ১০ জুলাই কেন্দ্র থেকে যশোর জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনোয়ার হোসেন বিপুলের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে গঠন করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী