নিন্দায় সোচ্চার সোনিয়া, মমতা অমরনাথে হামলা চালিয়ে ভারতকে রোখা যাবে না : মোদি
ইমরুল শাহেদ : সোমবার রাতে অমরনাথ হিন্দু তীর্থ যাত্রীদের উপর হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হামলা চালায় লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গিরা। এতে ৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ১৯ জন আহত হন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, হামলা চালিয়ে ভারতকে রোখা যাবে না। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। জম্মু-কাশ্মীরের আইজি মুনির খান বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি ইসমাইল। হামলা চালিয়ে পুণ্যার্থীদের পণবন্দি করার চক্রান্ত ছিল তাদের। তাদের কাছে মজুদ ছিল ৩ দিনের খাবার।
প্রশ্ন হচ্ছে কে এই ইসমাইল? ঘটনার তদন্তে জানা গেছে, এই রক্তপাতের নেপথ্যে রয়েছে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে সংগঠনের নিহত কমান্ডার বশির লস্করির মৃত্যুর বদলা নিতেই এই হামলা চালিয়েছে এ জঙ্গিরা। আর হামলার মূলচক্র লস্কর-ই-তৈয়বার জঙ্গি পাকিস্তানি নাগরিক আবু ইসমাইল। লস্করের এই সদস্য পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। মধ্য তিরিশের ইসমাইল গত সাত বছর ধরে লস্করের সঙ্গে জড়িত। ২০০ জঙ্গির একটি লস্কর শিবিরের সঙ্গে যুক্ত সে। ওই জঙ্গিদের ভারতে আক্রমণ চালানোর জন্যই ট্রেনিং দেওয়া হয় শিবিরে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এবিপি জানায়, উপত্যকায় হামলা চালানোর জন্য লস্করের জঙ্গিদের সক্রিয় করে তোলার কাজ করেছে ইসমাইল। কতজন হামলাকারী রয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই সংখ্যাটা ৫ থেকে ৬ জন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইসমাইল হামলা চালানোর কাজে হিজবুল মুজাহিদিনের স্থানীয় জঙ্গিদের ব্যবহার করছে। কারণ, স্থানীয় হিজবুল জঙ্গিরা এলাকা বেশ ভালো রকম চেনে। এছাড়াও হামলার কাজে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তাও মিলতে পারে।
অমরনাথে হামলাকারীরা যে বাসটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়, সেটি বালতল থেকে জম্মুর দিকে যাচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, বাসটি অমরনাথ বোর্ডের আওতায় অন্তর্ভুক্তও করা ছিল না, এরফলে বাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না। প্রসঙ্গত, সন্ধ্যা সাতটার পর জাতীয় সড়কের ওপর বাস চলার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাসটি ব্রেকডাউন হয়ে যাওয়ায়, সময়ের পর সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। এই হামলার প্রতিবাদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় প্যান্থর পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস মঙ্গলবার জম্মুতে বন্ধের ডাক দিয়েছে।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অফিসিয়াল টুইটার পোস্টে লেখা হয়েছে, অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করছি, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলাই নিন্দনীয়। আক্রান্ত ও নিহতদের পরিবারবর্গকে গভীর সমবেদনা জানাই। একইভাবে হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন অক্ষয় কুমার। টুইট করে তিনি বলেছেন, নিরীহ তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা হীনতার নতুন ধাপ। তিনি দুঃখিত, একইসঙ্গে ক্রুদ্ধ। আক্রান্তদের জন্য প্রার্থনা করছেন।
ঘটনার পরপরই রাজ্যটিতে হাই এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এবং অকুস্থলে উপস্থিত হন সেনা প্রধান। তার আগে তিনি দিল্লি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নয়াদিল্লির নর্থ ব্লকে এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বে বসে জরুরি বৈঠক। জানা গিয়েছে, বৈঠকে সেখানে উপস্থিত রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত, কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর প্রধানরা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টির উপর নজর রেখেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে স্থির হয়েছে, অমরনাথ যাত্রা পূর্ব-নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই চলবে। জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও তা রোখা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রাজনাথ।
এরপরই, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল এনএন ভোরা ও মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফোন করেন রাজনাথও।
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে অমরনাথ যাত্রীদের উপর কাপুরুষোচিত হামলায় মর্মাহত। এই হামলার সর্বস্তরেরই তীব্র নিন্দা করা উচিত।
হামলার নিন্দায় মুখর হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও।
হামলার নিন্দা করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি বলেন, এবারের যাত্রায় এরকম অঘটন ঘটতে পারে বলে একটা আশঙ্কা করেছিলাম। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সাফল্য সত্ত্বেও এই হামলা হল। ভীষণই দুঃখের। নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা ও আহতদের জন্য প্রার্থনার কথা বলেন তিনি। নিন্দা করেছেন কংগ্রেসের আহমেদ পটেল ও রাজীব শুক্লা। এছাড়া, হামলার নিন্দা করেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ মীরা কুমার, অশোক গহলৌত, লালুপ্রসাদ যাদব, পি চিদম্বরম। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, নিরীহ তীর্থযাত্রীরা এভাবে নিহত হওয়ায় যা কষ্ট, তা কোনো ভাষাতেই বোঝানো সম্ভব নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন, এই হামলার চক্রীদের রেয়াত করা হবে না।
উল্লেখ্য, অমরনাথ থেকে পুণ্যার্থীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব ছিল সেলিম নামের একজন মুসলিম ব্যক্তির উপর। জঙ্গি হানার জন্য সকলকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে না পারলেও এই মুসলিম ব্যক্তির জন্যই প্রাণে বেঁচে যান অন্তত জনা পঞ্চাশেক হিন্দু পুণ্যার্থী। সূত্র : টিওআই, সংবাদ প্রতিদিন, এবিপি সম্পাদনা:হুমায়ুন কবির খোকন