বিশেষজ্ঞদের মতামত সুশাসনের অভাবে বেসরকারি বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছে না উদ্যোক্তারা
তানভীর আহমেদ : বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ গতি পাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ব্যাংকগুলোতে পড়ে রয়েছে প্রচুর অলস টাকা। ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমলেও বিনিয়োগ মূখী হচ্ছে না তারা। গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও দাম বৃদ্ধি, জমি রেজিস্ট্রেশন, অবকাঠামোগত ব্যয় বৃদ্ধি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সুশাসনের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের আস্থাহীন পরিবেশ ফলে বেসকারি বিনিয়োগে আস্থা হারিয়েছে উদ্যোক্তারা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। প্রতিবছরই এডিপিতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৯ বছর ধরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ একই জায়গায় আটকে রয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বর্তমান সময়ে বিনিয়োগের পরিমান মাত্র দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ।
জানা যায়, দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে দুই লাখ খেলাপির হাতে ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। গত এক বছরে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে মাত্র তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বিনিয়োগ স্থবিরতার জন্য খেলাপি ঋণের এই অপসংস্কৃতীকেও দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়েছে প্রচুর অলস টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে মুনাফা জমা করলেও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে তা খরচ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ভৌত অবকাঠামো , গ্যাস-বিদ্যুত সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখানে বিদ্যমান। এদেশে গভর্ণমেন্ট পলিসিতে অনেক সময় কন্টিনিউইটি থাকেনা। বর্তমানে দেশে পলিটিকাল স্ট্যাবিলিটি আছে তবে কিছুদিনপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ কারণে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ ও কাজ করছে। ফলে অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়াও সুশাসনের অভাব, দূর্নীতি, জবাবদিহীতার অভাবের ফলে অনেক সময় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন তিনি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)-র ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ, অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর নিরসন প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জমি প্রাপ্তি নিয়ে আমাদের দেশে সমস্যা রয়েছে। যারা বিনিয়োগ করতে চায় তাদের ভূমি নিয়ে সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। অবকাঠামোগত খাতে অনেক দূর্বলতা আছে। আামাদের এখনও অ্যানার্জি সর্টেজ রয়েছে। দেশে সার্বিক ভাবে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যার ফলে বিশ্ব ব্যাংকের রিজাভ ডুইং বিজনেস ইন্ডিকেটর যেটা আছে সেখানে ১৮৯টি দেশের মদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩তম স্থানে। তার মানে হচ্ছে ১৭৩টি দেশ আমাদের উপরে অবস্থান করছে। এছাড়া আমাদের দেশে দূর্নীতি একটি বড় সমস্যা। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি