আসল অত্যাচারী কে?
া মাহমুদ হাসান
যে সব মানুষ অন্য মানুষের প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে জালেম বা অত্যাচারী বলা হয়। পৃথিবীতে অত্যাচারীর সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, কেউ নিজেকে কখনো অত্যাচারী বলে স্বীকার করে না। উল্টো দেখা যায়, অত্যাচারী নিজেকে মহামানব বলে দাবী করছে। সাধারণত অত্যাচারী ব্যক্তি ক্ষমতাবান হয়ে থাকে, বিধায় তাকে কেউ অত্যাচারী বলার দুঃসাহস করে না। এ কারণে অত্যাচার কী; তা যেমন বোঝা মুশকিল; তেমনি অত্যাচারীকে চেনাও কঠিন বিষয়। তবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের বিভিন্ন জায়গায় অত্যাচারীর বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীর সামনে অত্যাচারী লোকদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। প্রকাশ করে দিয়েছেন অত্যাচারীর পরিচয়। কোরআনে কারিমের ভাষায় অত্যাচারী বলা
এক. অত্যাচারী হলো, আত্ম অবিচারকারী (সূরা নামল : ৪৪)। সে নিজের প্রতি যে কোনোভাবে অবিচার করবে, সেই অত্যাচারী। এই আয়াতের আলোকে ্ুলি;অঙ্গহানি ও আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
দুই. অত্যাচারী সে তো নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণকারী (সূরা বাকারা : ১৪৫)। এখানে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণকারীকে অত্যাচারী বলে অভিহিত করা হয়েছে।
তিন. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার সাথে অংশীদার স্থাপনকারী (সূরা লুকমান : ১৩)। এই আয়াতে শিরককে বড় ধরনের অত্যাচার এবং ওই কারণেই শিরককারীকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
চার. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার বিধানের বিপরীত বিচার-ফায়সালাকারী (সূরা মায়েদা : ৪৫)। এখানে অত্যাচারী বলতে মনগড়া বিধানে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিচার-ফায়সালাকারীকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পাঁচ. অত্যাচারী হলো, যারা সাক্ষ্য গোপনকারী তথা প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুস বিষয়কে উল্টে মিথ্যার বেসাতি তৈরি করে (সূরা বাকারা : ১৪০)। এখানে মিথ্যা মামলার বাদী, সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিচারকদের অত্যাচারী বলা হয়েছে। ছয়. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার আদেশ অমান্যকারী (সূরা বাকারা : ৩৫)। এই আয়াত দ্বারা অত্যাচারী বলে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীকে বুঝানো হয়েছে।
সাত. অত্যাচারী হলো, অন্যের প্রতি উপহাসকারী, কাউকে অন্যায়ভাবে দোষারোপকারী এবং অন্যকে মন্দনামে আহ্বানকারী (সূরা হুজরাত : ১১)। এই আয়াতে অত্যাচারী বলে অন্যকে উপহাসকারী, কাউকে অন্যায়ভাবে দোষারোপকারী এবং অন্যকে মন্দ ও বিকৃত নামে আহ্বানকারীকে বুঝানো হয়েছে।
আট. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার প্রতি মিথ্যা আরোপকারী অথবা তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কোরআনে কারিমকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী (সূরা আনকাবুত : ৬৮)। এই আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহর ওপর মিথ্যাচারকারীকে অত্যাচারী বলে অভিহিত করা হয়েছে।
নয়. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার ঘরে তারই নাম স্মরণে বাঁধা প্রদানকারী এবং তা ধ্বংস সাধনে প্রচেষ্টাকারী (সূরা বাকারা : ১১৪) এই আয়াতে আল্লাহর ঘর তথা মসজিদসমূহে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির-আজকারে বাধা প্রদান করে তাদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে। এক কথায়, মসজিদে যারা ইবাদতের পরিবেশে বিঘœ ঘটায় তারা অত্যাচারী। এই ্ুলি;আয়াতের আলোকে মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি বাদে ভিন্ন কিছু করতে নিষেধ করা হয়েছে।
দশ. অত্যাচারী হলো, সুদভিত্তিক অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন ইত্যাদি পরিচালনাকারী (সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)। এই আয়াতে সুদখোর এবং সুদের সাথে কোনো না কোনো উপায়ে জড়িতদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
সারকথা হলো, অত্যাচার ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। সমাজের শৃঙ্খলা নষ্টকারী, মানুষের শন্তি হরণকারী, আল্লাহতায়ালার নাফরমানী, অবাধ্যতা, সীমাতিক্রম, কিংবা কারোর নিজের প্রতি অথবা অন্য কোনো মানুষের প্রতি অন্যায়-অবিচার, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, দুর্ব্যবহার এবং যে কোনো সৃষ্টিজীবের প্রতি তার ন্যায্য অধিকার হরণ করাকে অত্যাচার এবং যে ব্যক্তি তা সম্পাদন করে তাকেই অত্যাচারী বলে।