হে আকাশ! তুমি ক্ষান্ত হও
া ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, (আল্লাহর শাস্তি ও কাফিরদের ধ্বংসের পর) বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ! তুমি ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কাজ সমাপ্ত হলো। নৌকাটি জুদি পর্বতের ওপর স্থির হলো এবং বলা হলো, জালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হোক। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৪৪)
তাফসির : এই আয়াতে বিশ্ব ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত নুহ (আ.)-এর আমলের মহাপ্লাবন প্রমাণিত সত্য ইতিহাস। এখানে অল্প কয়েকটি লাইনে মহাপ্লাবনের সম্পূর্ণ ছবিটি আঁকা হয়েছে। মহাপ্লাবনের ঘটনা সম্পর্কেও বর্ণনা করা হয়েছে অপূর্ব ব্যঞ্জনাময় ভাষায়। ওই প্লাবনে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায় এবং সৎ ও ইমানদার মানুষের মাধ্যমে পুনরায় পৃথিবীতে মানুষের বংশবিস্তার ঘটে। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি নামক পর্বতে এসে ভিড়েছিল। কারো কারো মতে, জুদি পর্বত তুরস্কের আরারাত পর্বতমালার অংশ। আবার কেউ মনে করেন, ইরাকের মসুলের আশপাশে এই পর্বত অবস্থিত। এর ভিন্নমতও পাওয়া যায়।
কোরআনের ইঙ্গিত ও বাইবেলের বিবরণ থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয় যে হজরত নুহ (আ.)-এর জাতি যে দেশে বাস করত, তা আজ ইরাক নামে প্রসিদ্ধ। ব্যাবিলনের প্রাচীন নিদর্শনাবলিতে বাইবেলপূর্ব যেসব প্রাচীন শিলালিপি ও প্রস্তর ফলক পাওয়া গেছে, সেসব থেকেও এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। বলা হয়, ইরাকের মসুল নগরীর আশপাশেই নুহ (আ.)-এর জাতির আবাসস্থল ছিল। মসুলের উত্তরে ইবনে ওমর (রা.) দ্বীপের আশপাশে ও আরমেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত আরারাত পর্বতের ধারে হজরত নুহ (আ.)-এর বিভিন্ন নিদর্শন এখনো পাওয়া যায়। নখচিওয়ানের অধিবাসীদের মধ্যে আজও এ কথা প্রচলিত আছে যে এ শহরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন হজরত নুহ (আ.)।
হজরত নুহ (আ.)-এর উপরোক্ত কাহিনীর সঙ্গে মিলে যায় এমন কিংবদন্তি, যা গ্রিক, মিসর, ভারত ও চীনের প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়। বার্মা, মালয়েশিয়া, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলেও এ ধরনের কিংবদন্তি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। এর আলোকে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ কাহিনী এমন এক যুগের, যখন গোটা মানবগোষ্ঠী কোনো একটি ভূখ-েই বসবাস করত। যে জুদি পাহাড়ে হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা এসে থেমেছিল, তা কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইবনে ওমর দ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বাইবেলে এ নৌকার অবতরণের স্থানের নাম বলা হয়েছে আরারাত। আরারাত নামের এ পর্বতমালা আরমেনিয়া থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কুর্দিস্তান পর্যন্ত চলে গেছে। এ পর্বতপুঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম জুদি। এটি আজও জুদি নামে খ্যাত। প্রাচীন ইতিহাসগুলোতেও বলা হয়েছে, নুহ (আ.)-এর নৌকা এ স্থানে এসেই থেমেছিল। ঈসা (আ.)-এর জন্মের ২৫০ বছর আগে বেরাসাস নামে ব্যাবিলনের জনৈক ধর্মীয় নেতা প্রাচীন পরম্পরাগত বর্ণনার ভিত্তিতে তাঁর দেশের যে ইতিহাস রচনা করেন, তার মধ্যে তিনি হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা ভেড়ার স্থান হিসেবে জুদি পাহাড়কেই উল্লেখ করেছেন। অ্যারিস্টটলের শিষ্য আবিদেনুস তাঁর ইতিহাসে এর সত্যায়ন করেছেন। তিনি সে যুগের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ইরাকের বহু লোকের কাছে সে নৌকার খ-িত অংশ সংরক্ষিত আছে। এগুলো ধুয়ে-মুছে তারা রোগীদের পানি পান করায়। (সীরাতে সরওয়ারে আলম)
নবী কারিম সা. আরও বলেছেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে, বাবা তার কন্যাদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিবে, শিষ্টাচার শিক্ষা দিবে এবং যতেœর সঙ্গে লালন-পালন করবে, কন্যাদের ওপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির ওপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। হজরত জাবের রা. বলেন, মহানবী সা. বলেছেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান হয় আর সে তাদের লালন-পালন করে, তাদের প্রতি মমতা দেখায় এবং তাদের ভার বহন করে; তাহলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। প্রশ্ন করা হলোÑ হে আল্লাহর রাসুল, যদি দুজন হয়? নবীজি বললেন, দুজন হলেও। হজরত জাবের বলেন, ধারণা করা হয় কেউ যদি নবীজিকে বলতেন, যদি একজন হয়? তাহলে নবীজি সা. বলতেন, একজন হলেও। (মাজমাউয-যাওয়াইদ)