সামাজিক কুসংস্কার একাল সেকাল
া আহমাদ উল্লাহ
একসঙ্গে কয়েকজন বন্ধু বসে গল্প-গুজব করছে। তাদের মধ্যে কেউ উপস্থিত না হলে তার সম্পর্কে পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ হতে থাকে, এমতাবস্থায় সে উপস্থিত হলে- অনেকেই বলে উঠে আপনি অনেকদিন বাঁচবেন। কারণ একটু আগেই আপনার কথাই বলছিলাম! এমনই বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। সমাজজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কার সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকি। ইসলামে কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। এমন কাজ, কথা ও প্রথা মানা যার কোনো বাস্তব ও ধর্মীয় ভিত্তি নেই।
মানুষের তৈরি যুক্তিহীন এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস, কথা, কাজ ও প্রথাকে সহজ বাংলায় কুসংস্কার বলা হয়। এসব কুসংস্কারে কারণে অনেকের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। আবার কোথাও কুসংস্কারের কবলে জীবনহানীর ঘটনাও ঘটে। কিছু কিছু কুসংস্কার তো শিরকের পর্যায়ভূক্ত। আবার কিছু বিষয় সাধারণ বিবেক বিরোধী এবং রীতিমত হাস্যকর। মূলতঃ বাজারে ;কি করলে কি হয়; জাতীয় বই এসবের সরবরাহকারী।
কিছু মানুষ চরম অন্ধবিশ্বাসে এগুলোকে লালন করে। সমাজে প্রচলিত এসব কুসংস্কারের কারণে আল্লাহর ওপর আস্থা ও তার রহমতের প্রতি নির্ভরতা কমে যায়; চিরাচরিত ধর্মবিশ্বাসে চিড় ধরে। মূলতঃ কুসংস্কার হলো ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরের প্রচলিত নিয়মবিধি- যার প্রতি মানুষ অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করে সেই বিশ্বাসকে ভিত্তি করে জীবনে চলার চেষ্টা করে।
কুসংস্কারজনিত অন্ধবিশ্বাসে পড়ে মানুষ নিজেদের ঈমানকে দুর্বল করে তুলছে। বস্তুত মুসলমানের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসাই যথেষ্ট। ইসলামী শরিয়ত পরিপন্থী প্রচলিত এসব বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্যকর্তব্য। এছাড়া কুসংস্কার বন্ধের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানো সবার ঈমানি দায়িত্ব।
কুসংস্কার প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, বরং তা শুভ বলে মনে করা ভালো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শুভ লক্ষণ কী? তিনি বললেন, এরূপ অর্থবোধক কথা, যা তোমাদের কেউ শুনতে পায়। (বুখারি শরিফ) আমরা জানি, অজ্ঞতা ও অশিক্ষা থেকে সৃষ্টি হয় যাবতীয় কুসংস্কারের। ফলে সমাজে নানা রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই অজানাকে জানতে হবে, অচেনাকে চিনতে হবে। যতদূর সম্ভব।