কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণের প্রধান কারণ
মিল্টন খন্দকার, গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনায় গাজীপুরে জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাই ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণের প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন তদন্ত কমিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর তার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এ সময় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাহমুদ হাসানসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তদন্ত কমিটির কোনো সদস্য সেখানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত রিপোর্টে বয়লার বিস্ফোরণের সাতটি কারণ চিহ্নিত করেন। তার মধ্যে ৫টি হলো যান্ত্রিক ও বাকি দুইটি হলো কারখানার প্রশাসনিক ত্রুটি। এর মধ্যে প্রধান কারণই হচ্ছে কারখানার সেফটি বাল্বের যান্ত্রিক ত্রুটি। রিপোর্টে বলা হয়- যান্ত্রিক ত্রুটিগুলোর মধ্যে সেফটি বাল্বের যান্ত্রিক ত্রুটি ও সেফটি বাল্ব সঠিকভবে কাজ না করা। ফিজিক্যাল ফাগে ত্রুটি, মেটালিক ক্ষয়, বয়লার পেশার গেজে ত্রুটি এবং বৈদ্যুতিক সিগন্যালে ত্রুটি।
এছাড়া বয়লারে প্রেসার গেজটি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ডেলিভারী লাইন বন্ধ থাকা, লিভারটিতে সøট কাটা না থাকায় বয়লারের কম্পনে ডেড ওয়েট উচ্চ চাপের দিকে সরে গিয়ে ওভারপ্রেসার সিচুয়েশন তৈরি হয়েছিল এবং অপারেটর কর্তৃক প্রেসার রিলিজ করতে ব্যর্থ হওয়া ও বয়লার মেইনটেন্যান্স কর্তৃপক্ষের বয়লার অপারেটরদের উপযুক্ত তদারকির অভাব ছিল।
প্রশাসনিক ত্রুটি দুইটি হলো- কারখানার প্রশাসনিক অবকাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। এসব কারণেই বয়লারটি বিস্ফোরিত হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, বিস্ফোরিত বয়লারটি ১৯৯৬ সালে জার্মানির অমনিকা কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালে ইউরোপ এশিয়াটিক কোম্পানি কর্তৃক স্থাপন করা হয়েছিল। যার রেটিং ছিল ৯৬৮ বর্গফুট। বয়লারটি প্রথম ২০০৩ সালের ১০ জুন বয়লার পরিদর্শক কর্তৃক পরিদর্শন করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন লাভ করে। সর্বশেষ প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ১০ বারে এ বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত চালানোর অনুমতি প্রদান করে। ১৯ জুন এটির নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের দিন বয়লারটির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও বয়লারের আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়েছে এমনি বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই বয়লারটির বিকট শব্দে বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত ও অন্তত ৭০জন আহত হয় বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। ওইদিনই গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায়হেনুল ইসলামকে প্রধান করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নির্ধারিত সাত কার্যদিবসের মধ্যেই এ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান