চাকরিজীবীদের গলার কাঁটা চিকুনগুনিয়া
রিকু আমির : চিকুনগুনিয়া জ্বর সেরে গেলেও গিটে ব্যথ্যা ও ফোলা থেকে যাচ্ছে। যার প্রভাবে অনেক চাকরিজীবী কর্মস্থলে নিয়মিত হতে পারছেন না। এতে কেউ কেউ ‘বেতন কর্তন’-এর শিকার হওয়ার পাশাপাশি কর্মস্থলে নিয়মিত হতে না পারলে চাকরি থেকে ‘বাদ দেওয়া’র হুমকিও পেয়েছেন।
রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে চাকরি করেন বগুড়ার ইমরান হোসেন। কর্মক্ষেত্রে তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অনিয়মিত। গত মঙ্গলবার মহাখালীতে বসে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, জ্বর তো এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে গেছে। কিন্তু জয়েন্ট (গিটে) পেইন এত বেশি, দোকানে গিয়ে যে কাজ করব, সেটা সম্ভব না। বস-কে বলেছি, তিনি মানতে চান না। উল্টো বলেন, তোমার মতো অনেকের চিকুনগুনিয়া হয়েছে। তারা যার যার কাজ করছে। গার্মেন্টকর্মী রেহেনা বলেন, ছুটি দিতে চায় না। সকাল-বিকাল ফোন করেÑ কাজে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কেমনে যামু। শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা। সুপারভাইজার কইছে, বেতন নাকি কাইটা রাখব। এইটা কেমন ইনসাফ?
চিকুনগুনিয়া থেকে সৃষ্ট গিটে ব্যাথার কারণে চাকরিজীবীদের এসব ভোগান্তির কথা জানালে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, যারা তাদের কর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করছেন, তারা হয়তো চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সচেতন নন। প্রত্যেককে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে আমাদের কাজ চলছে। গণমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, আমাদের ডাকা হচ্ছে টেলিভিশন প্রোগ্রামে।
বেসিক ব্যাংকের দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন কর্মকর্তার শ্যালক মাজহারুল ইসলাম। মাজহারুল চাকরি করেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে। কোম্পানির নাম উল্লেখ না করে বেসিক ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, মাজহারুলের জ্বর নেই এখন। কিন্তু খুব ব্যথায় ভুগছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই পারে না। ওদিকে অফিস থেকে ফোন করে রীতিমতো হৈ চৈ। বলেই দিলÑ না গেলে চাকরি নাকি ‘নট’ করে দেবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু গিটে ব্যথাটা সারতে একটু সময় নেয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
গিটে ব্যথায় আক্রান্তদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় ভবনে মেডিসিন বিভাগে আর্থ্রাইটিস ও আথ্রালজিয়া ক্লিনিক চালু করেছে সরকার। এ তথ্য জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির যদি জ্বর-পরবর্তী গিটে ব্যথা বা গিরা ফোলা সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, তবে এই ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন। ক্লিনিকটি সপ্তাহে ৩ দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শনিবার মেডিসিন বিভাগের ৪২৪ নম্বর রুমে, রোববার ৫৩০ নম্বর রুমে, বুধবার ৪২৪ নম্বর রুমে রোগী দেখা হয়।
গিটে ব্যথার জন্য চাকরিজীবীরা যে সমস্যায় আক্রান্ত, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানান অধ্যাপক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী