২৮ দেশে চলছে অপারেশন আইরিন, বৈধ পথে আসছে অবৈধ অস্ত্র!
বিপ্লব বিশ্বাস : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৈধ ও অবৈধ পথে অস্ত্র নিয়ে এসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলা ও নাশকতা চালাতে পারে দুর্বৃত্তরা। যে কারণে সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে নজরদারি জোরদার করেছে। বিশেষ করে জঙ্গিরা নানা কৌশলে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে। সবদিক মাথায় রেখেই গোয়েন্দারা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পরিচালিত ‘অপারেশন আইরিন’ অভিযানের অংশ হিসেবে অতিসম্প্রতি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২১টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কাস্টমস নেটওয়ার্কসমূহের মধ্যে ৩ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ দিন ‘অপারেশন আইরিন-২’-এর এবারের থিম ‘রেগুলার অপারেশন টার্গেটিং অ্যান্ড কাউন্টারিং ট্র্যাফিকিং ইন স্মল আর্মস অ্যান্ড লাইট ওয়েপন্স’। ‘অপারেশন আইরিন’ নিরাপত্তা রক্ষায় ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ‘রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো অফিস’ (রাইলো) কর্তৃক পরিচালিত অভিযান। বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৮টি দেশ এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর এই অভিযানের লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে কাজ করছে।
এদিকে, অপারেশন আইরিনের মাধ্যমে গত ৯ ও ১১ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২১টি অস্ত্র জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এগুলোর মধ্যে ওয়ালথার পিপি ১৬টি এবং এইচকেফোর ব্র্যান্ডের ৫টি অস্ত্র রয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্র এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যেতে পারে কিংবা অপব্যবহার হতে পারে বলেও শঙ্কিত শুল্ক গোয়েন্দারা। আমদানি নিষিদ্ধ অস্ত্র নিয়ে আসার ঘটনার রহস্য উন্মোচনে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে সরকারের এ সংস্থাটি। ১১ জুলাই গঠিত এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোনো অবৈধ অস্ত্র আমদানি করেননি। সম্পূর্ণ বৈধ পথে সব নিয়ম মেনেই এসব অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দারা না জেনে, না বুঝে এসব অস্ত্র জব্দ করেছেন বলে দাবি তাদের। এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও জানান তারা। ইতালি থেকে একটি চালানে ৫৮টি অস্ত্র নিয়ে আসে মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানি। এসব অস্ত্রের মধ্য থেকে পুরনো ও অকার্যকর ১৯টি অস্ত্র জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী পুরনো ও অকার্যকর অস্ত্র আনার ওপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে তারা এসব অস্ত্র জব্দ করেছেন। আমদানি করা এসব অস্ত্র পরীক্ষার সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯টি অস্ত্র পুরনো ও পুনঃসংস্কৃত। একই সঙ্গে এসব অস্ত্রের অধিকাংশের বডির বিভিন্ন অংশের গায়ে খোদাই করা মুদ্রিত ইউনিক নম্বর ভিন্ন ভিন্ন। এই অনিয়মের কারণে শুল্ক আইনের বিধান অনুযায়ী এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়।
অস্ত্র আমদানিকারকরা কী এ বিষয়গুলো জানেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মইনুল খান বলেন, ‘তারা জেনেশুনেই এসব পুরনো অস্ত্র নিয়ে আসছে। তাই এর রহস্য উন্মোচনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক জোবায়দা খানম।
তদন্ত দলটি মূলত দুটি বিষয় খতিয়ে দেখবে বলে জানান ড. মইনুল খান। প্রথমত, পুরনো ও নিম্নমানের অস্ত্র কৌশলে গ্রাহকদের কাছে নতুন হিসেবে বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের ব্যবহৃত এবং নম্বরহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ অস্ত্র কী উদ্দেশে আনা হয়েছে তা খুঁজে বের করা। এছাড়া এসব অস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করবে কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন তারা। এসব অস্ত্র চোরাই মার্কেটে বিক্রি হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি তদন্তের পর বলা যাবে। দেশে প্রায় ১০০ অস্ত্র আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবার বিষয়েই খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।
নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পুরনো নিম্নমানের অস্ত্র কেন আনা হয়েছে জানতে চাইলে মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির মালিক নূর উদ্দিন ইমরান বলেন, ‘যেসব অস্ত্র নিয়ে এসেছি সেগুলো শতভাগ নতুন। শুল্ক গোয়েন্দারা কেন পুরনো বলছেন জানি না। অস্ত্রগুলো আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, সেই সুযোগও আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। যেহেতু অস্ত্রগুলো দেখতে পাচ্ছি না, তাই নতুন-পুরনো বিষয়ে আমি নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। কাগজপত্রের একটি দাড়িকমাও কম নাই। বাংলাদেশের আমদানি নীতি অনুযায়ী যত কাগজ দরকার সবই দেওয়া আছে। রপ্তানিকারকরাও কখনও নতুন অস্ত্রের দাম নিয়ে পুরনো অস্ত্র দেবে না। তাহলে কেন ৩০০ পার্সেন্ট ট্যাক্স দিয়ে অস্ত্র আমদানি করবো? সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ