শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের প্রশংসা জাতিসংঘের
সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : জাতিসংঘ সদরদফতরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অফ পিসকিপিং অপারেশন (ডিপিকেও)-এর প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যা পিয়েরে ল্যাঁক্রুয়ার সাথে ১৩ জুলাই এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে ডিপিকেও-এর প্রধান এবছরের পহেলা অক্টোবর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ডিফেন্স মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের প্রস্তুতিমূলক মিটিং নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উক্ত প্রস্তুতিমূলক সভা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ডিপিকেও প্রধানকে জানান। উল্লেখ্য, কানাডাতে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিফেন্স মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয় এবং জাতিসংঘ সদরদফতরে পিসকিপিং অপারেশনের বিভিন্ন উচ্চ পদে বাংলাদেশি অফিসার পদায়নের সুপারিশ করা হয়। ডিপিকেও প্রধান বাংলাদেশি অফিসার পদায়নের সুপারিশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে আশ্বস্ত করেন। ডিপিকেও প্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিযুক্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে পিসকিপিং অপারেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন ও সার্বিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লইটি উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা পারভীন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ওভারসিজ অপারেশনের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলাম এবং মিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মো: নুরএলাহি মিনা।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন পরিদর্শন করেন। তিনি মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা ও কার্যক্রমের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিস্তারিত অবহিত করেন।
মিশনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণও স্ব স্ব ক্ষেত্রে অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানান। উঠে আসে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, এসডিজি, মাইগ্রেশন, মানবাধিকার রক্ষা, দূর্যোগ মোকাবিলা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সফলতার নানা দিক।
এসময় উপস্থিত জাতিসংঘের চলতি হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরামে যোগদানকৃত বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ এসডিজি বাস্তবায়নে জাতীয় অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জাতিসংঘে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অব্যাহত সাফল্যের প্রশংসা করেন। চলতি এইচএলপিএফ-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সফল অংশগ্রহণ কামনা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সরকার এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একজন ‘এসডিজি বাস্তবায়ন সমন্বয়কারী’ নিয়োগ দিয়েছে, যা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হয়েছে’।
বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের স্বার্থরক্ষা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাগণকে ধন্যবাদ জানান। মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জাতিসংঘে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ মিশন থেকে প্রকাশিত একটি পাবলিকেশন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের হাতে তুলে দেন।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব হাইতিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশন পরিদর্শন উপলক্ষ্যে আগামী ১৫ জুলাই হাইতির উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন।
সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ