সাইদ রিপন : জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলায় দায়ী ৫৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলোর কোনো সদস্যের গাফিলতিও সহ্য করবে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান কমিশন মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতেই কঠোর অবস্থান অবলম্বন করছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এর আগে মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র দখল ও জোরপূর্বক জালভোট দেওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৮ জন সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় ইসি। এই পরিপ্রেক্ষিতে দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই ৫৮ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যার অনুলিপি ইসি সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টকে চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর বা পদানবতি বা তার বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর পৌরসভায় ২৫ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান (রিটন)। কেন্দ্র দখল ও জোর করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে ওই নির্বাচন বয়কট করেন বিএনপির প্রার্থী ও পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। ওই নির্বাচনের দিন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটগ্রহণ চলাকালে সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের মেহেরপুর-১ (পুরুষ) এবং একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থিত মেহেরপুর-২ (মহিলা) কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়। অর্থাৎ ওই দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ ছিল, ভোটের আগের রাতে ওই কেন্দ্র দুটিতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়। এতে ওই দুই কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে কর্তব্য পালনে চরমতম অবহেলা প্রদর্শনের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।
মেহেরপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেহেরপুর-১ কেন্দ্রে একজন এসআই, ৩ জন এএসআইসহ ১৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, লাঠিসহ ১৫ জন আনসার (মহিলা-৮ জন, পুরুষ-৭ জন) সব মিলিয়ে ওই কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন ২৯ জন। একই হারে মেহেরপুর-২ কেন্দ্রেও একজন এসআই, ৩ জন এএসআইসহ ১৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, ১৫ জন লাঠিসহ আনসার (মহিলা-৮ জন, পুরুষ-৭ জন) সদস্যসহ মোট ২৯ জন দায়িত্বে ছিলেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ