সীমান্তে আত্মগোপনে থেকে ভারত-বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করতো জঙ্গি সোহেল
বিপ্লব বিশ্বাস : ভারত সরকারের পুরস্কার ঘোষণার পরই বাংলাদেশে পালিয়ে আসে জঙ্গি নেতা সোহেল মাহফুজ। এরপর সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে সেখান থেকেই জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে এই দুর্ধর্ষ জঙ্গি হাতকাটা সোহেল। ওই সময় তার একটি হাত না থাকাতে সহজেই তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল বলে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে লুকিয়ে থাকত এই জঙ্গি। ভারতে থাকাবস্থায় সেখানে জেএমবির শাখা গঠন করে।
এদিকে গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলেছে, সোহেল মাহফুজ ছাড়াও জেএমবির অন্তত দুই ডজন নেতাকে গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। কিছু জঙ্গি পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পালিয়ে গেলেও দু-একজন দেশের ভেতরেই থাকতে পারে। তাদের গ্রেফতারে র্যাব ও পুলিশ কাজ করছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, সোহেল মাহফুজ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর সে পুরনো জেএমবি ছেড়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। মনিরুল বলেন, গতবছর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনার সময় সে উপস্থিত ছিল। হামলার আগে সে অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে আসে। বাংলাদেশে জেএমবির উত্থানকালে এই মাহফুজ ছিল তৎকালীন জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের সহযোগী এবং জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য। সেই সময়ে ২০০৫ সালে নওগাঁর আত্রাই এলাকায় বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে বোমা বানাতে গিয়ে সোহেলের একটি হাত উড়ে গিয়েছিল। গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে গত বছরের হামলায় জড়িত সন্দেহে তাকে খুঁজছিল পুলিশ। সেই হামলার মূল চক্রী হিসেবে বিস্ফোরকও সরবরাহ করেছিল সে। সোহেল মাহফুজ ছাড়াও শাহাদাত, রিমনসহ আরও বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত ছিল এই জঙ্গি। এক হাত বোমায় উড়ে যাওয়ায় তার পরিচিতি রয়েছে হাতকাটা সোহেল নামেও। জেএমবির হয়ে একটি হামলার সময় ককটেল ছোঁড়ার সময় সোহেল মাহফুজের হাত উড়ে যায়। গত কয়েক বছর ধরেই সোহেল মাহফুজ নামটি পুলিশের খাতায় ছিল। এই জঙ্গির গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় বহুবার মাহফুজের নাম উঠে এসেছে। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন মৌলভী বাজারের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে ফেলে তখন সেখানে থাকা আরও এক জঙ্গি মুসা কথা বলেছিল এই সোহেল মাহফুজের সঙ্গে।
বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ‘সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তছনছ করা গিয়েছে। তারা আর উত্তরাঞ্চলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’ পুলিশ জানিয়েছে, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করছিল। ঈদে ওই এলাকাতে জঙ্গিদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলেও পুলিশের কাছে আগাম তথ্য ছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় জঙ্গিরা কোনো অঘটন ঘটাতে পারেনি। সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা আরও দুর্বল হয়ে গেল বলে দাবি পুলিশের। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ