মেয়রের সাফ জবাব, জনমনের চাপ জবাব!
অজয় দাশগুপ্ত
কে কিভাবে কথা বলবেন তার একটা অলিখিত নিয়ম আছে বৈকি। যারা পদ পদে বড় জায়গায় মানুষ তাদের কাছ থেকে ভরসার কথা শুনতে চায়। বিশেষত যাদের তারা ‘বড়’ বানিয়েছে তাদের কাছ থেকে তারা তা আশা করতেই পারে। যারা এমন বড় হবার আগে দেশের আমজনতার কাছে কাঁচুমাচু হয়ে ধর্ণা দেন, তাদের ভোট বা সমর্থন পাবার জন্য রাতদিন ভজনা করেন তারা যদি ভাষা পাল্টে অচেনা মানুষের মতো কথা বলেন তখন কি কি পথ খোলা থাকে সামনে? ঢাকা একটি বিশাল নগরী। সরকার যাই বলুক দলিল যাই লিখুক দেড় কোটির উপর মানুষ বাস করে এই শহরে। একদিকে যেমন রমরমা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো সব বাড়ি-গাড়ি আরেকদিকে বস্তি। মাঝখানে স্যান্ডউইচের মতো মধ্যবিত্ত। এরাই কিন্তু মান ও নেতা নির্ণায়ক। এরা চাইলে মাথায় ওঠাতে পারে, না চাইলে মাটিতে নামাতেও দেরি করে না তারা। এই মানুষগুলোর ভালোমন্দ আর জীবন নিয়ে কথা বলার সময় সাবধান থাকলেই মঙ্গল। ঢাকায় এখন দুজন মেয়র। একজনের জায়গায় দুজন হবার কালে বিএনপি বলেছিল, ভোটে জিততে পারবে না বলেই আওয়ামী লীগ এটা করছে। তবে মানতে হবে দুজন থাকা দরকার। একজনের পক্ষে এতসব সামাল দেওয়া অসম্ভব। সে দুজনের একজন একদা টিভি তারকা আনিসুল হক। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের হতে পারেন ভাবা যায়নি। টিভি থেকে ব্যবসা সফল মানুষে পরিণত হবার পর মাঝে মাঝে দেখা যেত তাকে। এদেশে এই সমাজে সব সম্ভব। এক সকালে তিনিও এসে গেলেন সিনে। মেয়র পদে জয়ী হতে সময় লাগেনি তার। হবার আগে বলেছিলেন, মেয়র হলে মশা নিধন হবে প্রথম কাজ। সবাই জানে ঢাকার মশা নিধন এত সহজ কিছু না। চাইলেই তাদের সরিয়ে দেওয়া যায় না। জেলে ঢোকানোও অসম্ভব। একমাত্র দাওয়াই কীটনাশক। এখন সেটাও ডিজিটাল। হয়তো তাই দিলেও দেখা যায় না। মুশকিল হয়েছে কি এক রোগ চিকুনগুনিয়া তা নিয়ে।
এই রোগে ভুগে মানুষ এত কাতর এত বেশি ভয় পেয়ে গেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। মৃত্যুও হয়েছে কারও কারও। ফলে মানুষ তাদের সেই প্রিয় মেয়রের কাছে জবাব চেয়েছিল। বলাবাহুল্য তারা চেয়েছিল প্রতিকার। একদা মিতভাষী চমৎকার বাচনভঙ্গির মেয়র যে ইতোমধ্যে ভাষা পাল্টে ফেলেছেন সেটা মানুষ টের পায়নি। রাজনীতি ও গদির এই এক মোহ এক ক্ষমতা। কে কখন বদলে যায়, কি করে, কি বলে কেউ জানে না। মেয়র আনিসুল হকও বদলেছেন। বেশ কঠিনভাবে বলে দিয়েছেন তারা মশা চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী নন। ওখানে থামলেও হতো। আরও একধাপ এগিয়ে বাড়ি বাড়ি মশার ঔষধ ছিটাতে না পারা বা এ জাতীয় কথার ভেতর দিয়ে জনমনে রোষ না ছড়াতেও পারতেন তিনি।
মশা আছে থাকবে। ম্যালেরিয়া গেছে ডেঙ্গু এসেছে। এখন চিকুনগুনিয়া। একদিন এ নামও থাকবে না। তবে মেয়রের এই কথাগুলো থেকে যাবে। মানুষ যেদিন ভোট দিতে যাবে, দিতে পারবে যেদিন তারা ভীতিহীন হয়ে বলবে সেদিনই তাদের মনের কথা জানা যাবে। স্বীয় জিভ শাসনে না রাখার ফল রাজনীতি হাড়ে হাড়ে টের পেলেও ভুলে যায়। মেয়র আনিসুল হক রাজনীতির মানুষ নন। দল বা নৌকা ডুবলে তার কি আসে যায়?
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান