অর্থপাচার রোধে গ্লোবাল ইকোনমির সাথে দেশকে সংযুক্ত করতে হবে : অধ্যাপক আবু আহমদ
আরিফুর রহমান তুহিন : ধনিরা তাদের টাকার অবাধ লেনদেন করতে না পারায় এবং অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারীরা তাদের টাকা নিরাপদে রাখতে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। তাই অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশকে গ্লোবাল ইকোনোমির সাথে সংযুক্ত করে ধনি লোকদের অবাধে লেনদেনের সুযোগ করে দিতে হবে। একই সাথে অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জনের সকল পথ বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। গতকাল সোমবার টিভিএনএ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বলেন।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অর্থপাচার বেশি না কম হচ্ছে এটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সত্য হলো বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে টাকা পাচার হচ্ছে। সেই টাকা সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে,মালায়শিয়া যাচ্ছে,ইউএসএ যাচ্ছে। কোন না কোন দেশে যাচ্ছে। অতি ধনী যারা তারা অল্প হলেও তাদের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এখন নেওয়ার প্রক্রিয়া বিভিন্নভাবে আছে। আর এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর কেউ বন্ধ করতে পারেনি। এটা বন্ধ করা সম্ভব না। তার মতে পাচার হওয়া টাকার অন্যতম উৎস অবৈধ উপায়ে অর্জন। অর্থাৎ লুটপাটের টাকা। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র আমাদের দেশে এত সহজে অবৈধ উপায়ে টাকা ইনকাম করা যায়। ব্যাংক লুটপাট ও দুর্নীতির টাকাগুলো বেশি পাচার হচ্ছে। অর্থপাচার রোধে এই ধরণের আয়ের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি সমস্যা হলো, বিদেশী ছাড়া নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বাইরে এই দেশের টাকা অন্য কেউ অবাধে দেশের বাইরে নিতে পারে না। এত বাধার পরেও নেওয়াটা কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে তারা বিভিন্ন বেআইনি পথে নিচ্ছে। কিন্তু টাকাটা যদি কনভার্টেভল হইত তাহলে তারা নিতে ইজি ফিল করতো।
কিভাবে টাকা পাচার রোধ করা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি বিচ্ছিন্ন ইকোনোমি। এটাকে গ্লোবাল ইকোনোমি ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত হতে হবে। যদিও গ্লোবালাইজেশনের অনেক সুযোগ বাংলাদেশ অনেকবার পেয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ একটি এ্যাক্টও সাইন করতে পারেনি। পৃথিবীতে আমদের ইকোনোমি লেভেলের কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবেনা যারা একটি এ্যাক্টও সই করেনি। অথচ অনেক দেশ ডজনের উপরে এ্যাক্ট সাইন করেছে। চায়না ফ্রী ট্রেড এগ্রিমেন্ট এর জন্য আমাদেরকে একটা অফার দিয়ে বসে আছে। বাংলাদেশ এটা নিয়ে চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে। আমি মনে করি সিরিয়াসলি এটা চিন্তার মধ্যে নেয়া উচিৎ। নইলে আমরা বড় ইকোনোমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। ধনী লেকেরাও তখন টাকা রাখতে অস্বস্তিবোধ করবে।
তার মতে,পৃথিবীতে যত অশান্তি হয়েছে সবগুলো ছোট ছোট ইকোনোমির দেশগুলোতে। টাকাগুলোও যাচ্ছে ছোট ইকোনোমির দেশ থেকে বড় ইকোনোমির দিকে। সেই দেশগুলোও টাকাগুলো নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে। ওরা কিন্তু জানতে চাইছে না টাকাটা কোথা থেকে আসছে। কিন্তু যদি গ্লোবাললি এগ্রিমেন্ট হইত তবে পাচার হওয়ার প্রক্রিয়া কমে যেত। কারণ তখন জবাবদিহিতা থাকত।
সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে বাঙ্গালী যারা বিদেশে আছে তারাও বৈধ উপায়ে টাকা রাখতে পারেন। আবার আমাদের এখান থেকেও যেতে পারে। সেটাতো সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করা যাচ্ছে না। সরকার এটাকে লেনদেন বলছে। কিন্তু লিগ্যাল লেনদেন হলে কোন সমস্যা নাই। তবে মানি ট্রানসফার হচ্ছে।
দেশের পরিচালকদের দুর্বলতার কথা তুলে তিনি বলেন,আমরা মার্কেটগুলোকে ডেভলাপ করছি না। স্টক মার্কেটে এখনো সবাই ঢুকছে না। ইউনিলিভারের মতো বড় কোম্পানী এখনো স্টক মার্কেটের বাইরে। অথচ তারা অন্য দেশের স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করছে। কিছুদিন আগে একটা অর্থবিল পাশ হলো। সেখানে স্টক মার্কেট নিয়ে কিছু বলা হল না। দেশের স্টক মার্কেট যদি আরও বড় এবং গভীর থাকত তাহলে ধনি লোকগুলো এখানে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতো। পৃথিবীর সকল দেশে গোল্ড মার্কেট ওপেন অথচ আমাদের দেশে এটা বেআইনি। ফলে এখানে অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে। চোরাকারবারিরা এখানে ঢুকে পরছে। তারা সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে না। আবার এর থেকে অর্জিত অর্থও দেশে রাখতে না পেরে পাচার করছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে একটা গোল্ড পলিসি করবেন। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। এজন্য মনে করি, ‘ধনি লোকদের টাকা পাচার ঠেকাতে কমিউনিটি মার্কেট, স্টক মার্কেট, গোল্ড মার্কেটসহ সকল মার্কেটকে উম্মুক্ত ও বিশ্বায়ন ঘটাতে হবে।’
সব থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। আমাদের পলিটিক্যাল কালচারের চেইঞ্জ করতে হবে। এইযে এক দল আরেক দলকে শত্রু মনে করে। ধর মার কাট অবস্থা এটা দূর করতে হবে। ধনি লোকেরা অস্থিরতাকে খুব ভয় পায়। তারা তাদের এবং সন্তানদের নিরাপদ মনে করেন না। ফলে তারা নিরিবিলি কোনো দেশ খুঁজে। তখন তারা তাদের অর্থ ভিন্ন উপায়ে নিয়ে নেয়। তাই আমদের এই পলিটিক্যাল অস্থিরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে দেশের সকল নাগরিকের প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। তিনি যদি শুধু একটি দলের প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না। সম্পাদনা:হুমায়ুন কবির খোকন