টিবিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্বাচন পদ্ধতির আমূল সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচন হবে ইসির অধীনে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও রফিক আহমেদ : নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তর্ক-বিতর্কের চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন পদ্ধতির আমূল সংস্কার। নির্বাচনের সময়ে সরকারের ভূমিকা কি থাকবে তা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সহায়ক সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ বিষয়ে তার এবং দলের মতামত এভাবেই তুলে ধরেন। গত রোববার দলের পল্টনের কেন্দ্রীয় অফিসে টেলিভিশন নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্স বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে এলেই কেন নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতির কথা উঠে আসে এ প্রশ্নে প্রিন্স বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি যারা ক্ষমতায় থাকেন, যারা শাসক দল তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগণের তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকেন এবং তারা একটি ভালো নির্বাচন দিতে পারে না। এই কারণেই নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে এই আলোচনা সামনে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবেন তিনি এমন একটি নির্বাচন দিয়ে যাবেন- যা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনের সময় সরকার তার রুটিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করবে না। নির্বাচনে জনগণ যে রায় দেবেন সেটিকেই তারা মেনে নেবেন। ক্ষমতাসীন সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে একটি ভালো নির্বাচন দেওয়া।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের বিষয়ে এই বাম নেতা বলেন, ৯০-এর গণআন্দোলনের পরে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে যে ড্রাফটি করা হয় সেটি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ছিল। সেখানে আমরা বলার চেষ্টা করেছিলাম অন্ততপক্ষে তিনটা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যেন হয়। সেক্ষেত্রে বলা হয়েছিল এই তিন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলবো। যারা একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। মনোজগৎটা এমনভাবে তৈরি হবে ক্ষমতায় যেই থাকুক ভালো নির্বাচন হবে। ওই সময় বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউই এটাকে সমর্থন করেনি। তারা বলেছে কেন তিনবার করতে হবে। তাদের দুই দলের মত ছিল আগে যে ক্ষমতায় যাবে সেই ঠিক করবে কি হবে পরের নির্বাচনে। এরপর আবারও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লিপিবদ্ধ করা হলো। এখনো দেশের বেশিরভাগ জনগণ চায় নির্বাচন হবে একটি নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
নির্বাচনি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চেয়ে এই রাজনীতিক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রধান দলসহ বুর্জুয়া দলগুলো আসল এজেন্ডা না রেখে অন্য বিষয়কে সামনে নিয়ে আসছে। এমপিদের কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু তারা এলাকায় ফুটবল দলের ভাগাভাগিতেও অংশ নেয়। ফলে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হচ্ছে না। তারা আইন প্রণয়ন না করে সবকিছুতে ভাগ বসাচ্ছেন। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের দাবি হলো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলি। না ভোট দেওয়ার অপশন থাকতে হবে। নির্বাচনি পদ্ধতি এমন হতে হবে, অন্ততপক্ষে নির্বাচিত হতে গেলে অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ করার ক্ষমতা যুক্ত করার দাবি জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর ৫ বছরের জন্য জমিদার হয়ে যান এমপি সাহেবরা। যদি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের সেবা না করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা এবং পুনঃভোট দাবি করার অধিকার থাকতে হবে। এই আধুনিক চিন্তার ভেতরে কেন আমরা ঢুকতে পারছি না। দলগুলো এসব বিষয়ে কেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলে না।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিতর্কের সমাধানের পথ কি হতে পারে- এই প্রশ্নে রুহিন হোসেন বলেন, এখানে দুটি প্রধান কাজ। একটি হচ্ছে জনগণের ভোট। আরেকটি হলো ভোট গণনা। দুটোই স্বচ্ছ হতে হবে। সৎ প্রার্থীদের দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এখন যে পদ্ধতিতে যত টাকা দিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে হয় এবং দলে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতে হয় এটা এখন ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া ভোট করতে গেলে যেভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়, তার মানে কিন্তু সৎ মানুষ টাকা নিয়ে ভোট করতে পারবে না। সুতরাং এই জায়গা থেকে নির্বাচনকে যতক্ষণ মুক্ত করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেয়ার ইলেকশন হবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে একই সাথে আমরা যদি দেখি এখনকার সংবিধান অনুযায়ী আমরা বার বারই প্রশ্ন করি নির্বাচন কার আন্ডারে হবে। আসলে এর উত্তর হবে- নির্বাচন হতে হবে নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে। আর ওই সময় যারাই ক্ষমতায় থাকুক, তারা দলীয় সরকার হোক আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক তার কাজকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। তা হলে সেই সরকার রুটিন ওয়ার্ক করবে। মানে সাধারণ কাজ। কোনো নীতিগত কাজ করবে না। ওই জায়গাটা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক উঠবে না। এখন বারবার এই প্রসঙ্গ উঠছে কারণ হলো যারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করছে তারা ভালো নির্বাচন করতে পারে না। ওই সময়ের জন্য টেকনোক্র্যাট পদ্ধতি রয়েছে সংবিধানে। তাই এই সংবিধানের আওতায় থেকেও অন্য দলের আরও কয়েকজনকে নিয়ে এমন মন্ত্রিপরিষদ করতে পারেন, যাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকবে এবং ভোটটা ভালো হবে। দেখার ব্যাপার হলো সদিচ্ছা আছে কিনা। সদিচ্ছা থাকলে পথ খুঁজে নেওয়া যায়। সংবিধানের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া অবান্তর তা আমি মনে করি না। সূত্র : টেলিভিশন নিউজ এজেন্সি (টিভিএনএ), সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ