ডিবি কার্যালয়ে ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ায় ফরহাদ মজহারের অনুনয় বিনয়
আজাদ হোসেন সুমন : কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারের দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্যের গরমিল পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখেছে পুলিশ। গতকাল এই অসংগতি নিয়েই প্রায় ২ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে ফরহাদ মাজহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দারা।এদিকে বিষয়টি নিয়ে আর না এগুনোর জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন ফরহাদ মজহার। গত ১৬ জুলাই পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, ফরহাদ মজহার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকলে অথবা তিনি যদি এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। তা ছাড়া তিনি যদি নতি স্বীকার করেন-তাহলে দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ডিবি কর্মকর্তারা ফরহাদ মজহারকে তলব করলে সকাল ১১ টার দিকে তিনি স্ত্রী ফরিদাকে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে ঢোকেন। এরপর পদস্থ কর্মকর্তারা প্রায় দেড় ঘন্টা ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কথপোকথনের রেকর্ড, খুলনায় নিউ মার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজ ও অর্চনাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো এসব বিষয়ে গোয়েন্দারা তাকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু ফরহাদ মাজহার এসব প্রশ্নের জবাবে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তিনি বারবার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণার চেষ্টা করেন বলে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান। ডিবির একটি সূত্র জানায়, থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ায় ফরহাদ মজহার বিষয়টি নিয়ে আর না আগানোর জন্য অনুনয় বিনয় করেন। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার জিজ্ঞাসাবাদের সতত্যা স্বীকার করা ছাড়া আর কিছু বলতে রাজী হননি।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেছেন, ফরহাদ মজহারের বিষয়টি এখন আমাদের কাছে কাঁচের মত স্বচ্ছ। তিনি নিজেই বাসা থেকে বেরিয়ে খুলনা গেছেন। বাসায় তিনি অপহরণের কথা বলেছেন ব্যক্তিগত কারণে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বিষয়টি লেজেগোবরে করে ফেলবেন এটা তিনি বুঝতে পারেন নি। তিনি আরো বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছি। বাকী সিদ্ধান্ত উপর থেকে নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই ভোর রাতে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি স্ত্রীকে ফোন করে জানান, ফরিদা, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। পরে তার স্ত্রী আদাবর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন রাতে র্যাব-৬ যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে। পরে তাকে আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হাফিজ আল ফারুকের নেতৃত্বে তাকে যশোর থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর ফরহাদ মজহারকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। জবানবন্দি দেওয়ার পর তিনি নিজ জিম্মায় যাওয়ার আবেদন করলে শুনানি শেষে তার এই আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন