বাংলাদেশ নিয়ে শেখ হাসিনার ৫ ভিশন জাতিসংঘে রিপোর্ট উপস্থাপন বাংলাদেশকে নিরাপদ বদ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন শেখ হাসিনার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচটি ভিশন রয়েছে। এই সব ভিশন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ও তার সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। তার ভিশনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, ২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত হওয়া, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত করা এবং ২১০০ সালে ডেল্্টা প্লান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিরাপদ বদ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা।
জাতিসংঘ সদর দফতরে চলতি হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরামের ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ অধিবেশনে গত ১৭ জুলাই (নিউইয়র্ক সময়) এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। সেখানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। ১৭ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রী পর্যায়ের এই অধিবেশনে ৪৪টি দেশ তাদের ন্যাশনাল রিপোর্ট উপস্থাপন করবে। বাংলাদেশের পক্ষে এতে নেতৃত্ব দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ভিএনআর-এ বাংলাদেশের জাতীয় রিপোর্ট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এর আগে সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ এইচএলপিএফ-এর মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশন উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইকোসকের প্রেসিডেন্ট ফ্রেডলিক মুছিইওয়া ম্যাকামুরে। জাতিসংঘের মহাসচিবের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পিটার থমসন। বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এনা জানায়, মাল্টি মিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গত দুই বছরে এসডিজি অর্জনে অগ্রগতির এই ন্যাশনাল রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। রিপোর্টে এসডিজির ৭টি অভীষ্ঠ লক্ষ্য উল্লেখ করে বলা হয়, দারিদ্র্য নির্মূল, ক্ষুধা, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, লিঙ্গ সমতা, শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, জলজ জীবন ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ উল্লেখ করা হয়।
এসডিজিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে উল্লেখ করে এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন কৌশল যেমন- সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজিকে সন্নিবেশিত করা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করা, এসডিজি ট্রাকার সৃষ্টি, আন্ত:মন্ত্রণালয় এসডিজি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি গঠন, মন্ত্রণালয়ের ম্যাপিং এবং ডেটাগ্যাপ এনালাইসিস এর মতো বিষয়গুলোও এখানে তুলে ধরা হয়।
ভিএনআর প্রেজেন্টেশনে দেশের উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রদর্শন করা হয়। দেখানো হয় উচ্চ ও নি¤œ দারিদ্র্য রেখা যথাক্রমে ২৪ দশমিক ০৩ ভাগ, ও ১২ দশমিক ০৯ ভাগে নেমে এসেছে, যা ১৯৯১ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৬ দশমিক ০৭ ভাগ ও ৪১ দশমিক ০১ ভাগ। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প একটি বাড়ি একটি খামারের পাশাপাশি তুলে ধরা হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ, ডিজিটাল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিস এবং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গৃহীত বিশেষ বিশেষ কর্মসূচিগুলো। পদ্মা সেতুসহ মেগা অবকাঠামো প্রকল্পসমূহও এ রিপোর্টে স্থান পায়।
এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, চ্যালেঞ্জসমূহ কী এবং এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশলসমূহ প্রতিফলনের পাশাপাশি এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এই রিপোর্টে।
এইচএলপিএফ-এর দিনব্যাপি কর্মসূচিতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিকস ডিভিশনের সদস্য শামসুল আলম ও পিকেএসএফ-এর মহাপরিচালক আব্দুল করিম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সমন্বয় ও সংস্কার এন এম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জিআইইউ এর মহাপরিচালক আব্দুল হালিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই- এর পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।