আজ প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর বৈঠক উচ্চ আদালত থেকে পাঠানো বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির খসড়ায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ড্রাফ্টের কিছু স্থানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। এগুলো যাতে সংশোধন করা যায় এ বিষয়ে গত রোববার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার আবারো বৈঠক হবে। যাই আলোচনা হোক না কেন, ‘আমার হাত দিয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো অসম্মান হবে না।’
জানা যায়, সম্প্রতি বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া উচ্চ আদালত থেকে আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই ড্রাফটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে খর্ব করা হচ্ছে বলে মনে করছে আইনমন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করেন এবং প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রক্ষা করে বিধিমালা তৈরির পক্ষে মতামত দেন। জানা যায়, আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে জানান, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এটা যে ১১৬ অনুচ্ছেদকে বহাল রাখতে হবে। কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে খর্ব করা যাবে না। যে সকল বিষয় ড্রাফ্ট-এ বাদ পড়েছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনাও হয়। উভয় পক্ষের আলোচনার পর ফাইনাল ড্রাফ্ট রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্যে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আজ বৃহস্পতিবার আবারো প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনায় বসব। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী স্পষ্টত জানান, ‘আমার হাত দিয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো সম্মান নষ্ট হবে না’।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘বিচার কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যাক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত মেজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ও ছুটি মুঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’
এর আগে গত রোববার বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এবং সাক্ষাৎ শেষে আইনমন্ত্রী সংবাদ কর্মীদের জানান, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট বৃহস্পতিবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। চলতি বছরের ২৯ মে বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে ২ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তার আগেও আপিল শুনানিতে গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দফায় দফায় সময় নিয়েছিল সরকারপক্ষ। গত মাসে শেষবারের মতো আবারও সময় পায় রাষ্ট্রপক্ষ। সর্বশেষ গত সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই সপ্তাহের সময় চাইলে আপিল বিভাগ এক সপ্তাহের সময় দেন।
এর আগে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তলবও করেছিলেন আপিল বিভাগ। তারও আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত