নুহাশপল্লীতে হচ্ছে ‘ হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর’
মো. মিলটন খন্দকার, গাজীপুর : বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, উপন্যাসিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী গতকাল বুধবার যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সবুজে ঘেরা লেখকের সমাধিস্থল তার স্বপ্নের নুহাশপল্লীতে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে যান। পরে তিনি সাড়ে ১১টার দিকে সন্তানদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় মেহের আফরোজ শাওনের পিতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, মা সাবেক এমপি তহুর আলী, হুমায়ূনভক্ত, নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়ায় শরিক হন। হুমায়ূন আহমেদের দুই শিশু সন্তান নিশাত ও নিনিত তার পিতার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং কবরে হাত বুলিয়ে দেয়।
এর আগে হুমায়ূন আহমেদের ৩ বোন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ, রোকসানা আহমেদ নুহাশপল্লীতে যান এবং কবর জিয়ারত করেন। এছাড়া ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক ‘হিমু’ নুহাশপল্লীতে যান। পরে তারা হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও পু®পস্তবক অর্পণ করেন।
এদিকে সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শতশত ভক্ত নুহাশপল্লীতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। তাদের অনেকেই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান। সকালে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে আসেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক ও নাট্য অভিনেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন অন্য প্রকাশনীর মালিক মাহাজাহরুল ইসলাম, অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক আলমগীর রহমান ও প্রতীক প্রকাশনীর নূর-ই-মোস্তাকিন আলমগীর, নাট্য অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল এবং মারজুন মিজান প্রমুখ।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল থেকে নুহাশপল্লীর আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার কয়েকশ শিক্ষার্থী নুহাশপল্লীতে বৃষ্টি বিলাস কটেজে কুরআন খতম করেন। দুপুরে মেহের আফরোজ শাওন নিজ হাতে এতিম শিশুদের খাবার পরিবেশন করেন।
এর আগে কবর জিয়ারত শেষে মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় যে স্বপ্নটা ছিল তার প্রিয়স্থান ‘নুহাশপল্লী’ ভালমতো আছে। যে সবুজ বৃক্ষ পছন্দ করতেন সে সবুজ বৃক্ষে, বৃক্ষের ছায়ায় মাখামাখি হয়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের স্কুলটি ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ’ খুব ভাল অবস্থানে আছে। এ বছর এ স্কুলটির জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুব ভাল। এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে। বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে এ প্লাস পেয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের এ দুটি স্বপ্ন ভালভাবেই পূরণ হচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা ছিল ক্যান্সার হাসপাতাল। সেটা আমার একার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। যারা এদেশের গুণীজন আছেন, নীতিনির্ধারকরা আছেন তাদের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা সবাই মিলে যদি একটু উদ্যোগ নেন তাহলে এটা খুব সহজেই করা সম্ভব। আমি আমার পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমি করব। কিন্তু আমি একা, আমার আহবানে একটা ক্যান্সার হাসপাতাল করা সম্ভব নয়। যেটা হুমায়ূন আহমেদের একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল। হুমায়ূন আহমেদের ডাকে বাংলাদেশের তার ভক্ত, পাঠক, দর্শকরা যেভাবে একত্রিত হতো। আমার ডাকে সেটা হবে না। আমি আছি, থাকব। ক্যান্সার হাসপাতালের উদ্যোগটা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে নিতে হবে। যারা নীতিনির্ধরকরা আছেন, গুণীজন, বুদ্ধিজীবীরা আছেন আমি তাদের কাছে অনুরোধ করছি একটা উদ্যোগ নেবার। যেন সেই স্ব^প্নটা সবাই মিলে পূরণ করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি যাদুঘর’ নুহাশপল্লীতে হবে। খুব শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করব। আশা করছি আগামী ১৩ নভেস্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে হুমায়ূন আহমেদ যাদুঘরের একটা অংশ উদ্বোধন হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ