১৫ শর্তে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চায় বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য চাপ তৈরি করতে চাইছেন। যাতে শেখ হাসিনা সমঝোতা করতে বাধ্য হন। সমঝোতা করতে রাজি না হলে খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জন করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। লন্ডনে খালেদা জিয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এই ইস্যুতেও আলোচনা করেছেন। খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও তার বক্তব্য তুলে ধরবেন। লন্ডনে খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কাছে খবর রয়েছে খালেদা জিয়া পায়ের ও চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেও তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক মহলের লবিস্টদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে না দিলে ষড়যন্ত্রও করতে পারেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে বিএনপি ও খালেদা জিয়া সংলাপ চান। জাতিসংঘেরও মধ্যস্থতা চান। সংলাপে শেখ হাসিনা রাজি না হলে ও সমঝোতা না করলে খালেদা পুরনো পথেই হাঁটবেন। ফের নির্বাচন বর্জন করে বিপাকে ফেলতে পারেন শেখ হাসিনাকে। তবে এর আগে চেষ্টা করবেন সমঝোতার। ১৫ শর্তে সরকারের সঙ্গে বিএনপি সমঝোতা চায়।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া চাইছেন আন্দোলন না করে সমঝোতা ও সংলাপ। এই সংলাপ শুরু দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব পর্যায়েও হতে পারে। তারা আলোচনা করে সংলাপের একটা সমঝোতার পথে এগুলে শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সংলাপে বসবেন। তবে সংলাপে বসার জন্য তিনি শেখ হাসিনাকে কোনো ফোন করবেন না। তিনি মনে করছেনÑ সমঝোতা করতে হলে শেখ হাসিনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে রাষ্ট্রপতি নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে ও উদ্যোগে তা হতে হবে। দুই নেত্রীর আলোচনায় সমাধান হবে না বলেই একজন অভিভাবক ও মধ্যস্থতাকারী লাগবে।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সংলাপের জন্য একাধিক শর্তও দিতে পারেন। সমঝোতার জন্যও সরকার ও আওয়ামী লীগকে নানা শর্ত দেওয়া হবে। যেসব শর্ত নিয়ে ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া আলোচনা করছেন সেগুলোÑ ১. বিএনপি চেয়ারপাসন ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ২. বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. বিএনপির নিখোঁজ ও অপহরণ হওয়া নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিতে হবে। ৪. তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দিতে হবে। তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার ষড়যন্ত্র করা যাবে না। ৫. নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে, এই জন্য সংলাপে কয়েক দফা আলোচনা করে সমঝোতা করতে হবে। ৬. নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা কী হবে. কত সদস্য বিশিষ্ট হবে তা আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। ৭. সরকারের কারা কারা থাকবেন তাও আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করতে হবে। ৮. প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে পদত্যাগ করতে হবে। ৯. অন্য মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করবেন। ১০.নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। ১১. প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সরাতে হবে। ১২. নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ১৩. নির্বাচনে ইভিএম ও ডিজিভিএম করা যাবে না। ভোটারদের নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটদানের সুযোগ রাখতে হবে। ১৪. নির্বাচনে কারচুপি করা যাবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া যাবে না। ১৫. ভোটের ফলাফল প্রকাশ করতে হবে স্বচ্ছভাবে। ফলাফল প্রকাশে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার কাছে বিশেষ প্রতিবেদন দিয়েছেন তারেক রহমানের টিমের যারা নীরবে কাজ করছেন তারা। সেখানে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে গেলে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদেরকে পরাজিত করা হবে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে। জনগণের মধ্যে সেই ধরনের মনোভাব বিরাজ করছে। তবে হয়রানির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো আন্দোলনে যেতে আগ্রহী নয়।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া এই বিষয়গুলো নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করা ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আর পুরো বিষয়গুলো তুলে ধরেই তিনি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয় সেই জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চাইবেন।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া যাতে বিদেশে তার কাজকর্ম পরিকল্পনা মাফিক করতে না পারেন সেই জন্য সরকার থেকে তার বিদেশ সফর নিয়ে নানা কথা বলে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক মন্ত্রী বলেছেন, সরকারের ইচ্ছে ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের রোডম্যাপের পরিকল্পনা দিয়েছে। খালেদা জিয়া ও বিএনপি দেশি বিদেশি মহলের সহায়তায় যে সংলাপ চাইছে ও সমঝোতা চাইছে তাও সম্ভব না। নির্বাচন তারা আবারও বর্জন করলে ভুল করবে। এখন ভুলের মাশুল দিচ্ছে, আগামী দিনেও দিবে। সম্পাদনা : গিয়াসউদ্দিন আহমেদ