তাকওয়ার পথে চলা
াআহমদ আবদুল্লাহ
তাকওয়া মহান রব্বুল আলামীনের এক বিশেষ গুণ। যাদের তিনি এ গুণে গুণান্বিত করেন, তারা খুবই সৌভাগ্যশীল। তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। তাকওয়া এর আভিধানিক অর্থ ‘ভয় করা’, ‘ছেড়ে দেয়া’ ও ‘বেঁচে থাকা।’ পরিভাষায় বলা হয়, ‘মহান রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসায় প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে বিরত থাকা। গুণাহের সর্বপ্রকার কার্যাদি থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অশ্লীল কথাবার্তা, নির্লজ্জ কথোপকথন ও ব্যভিচার ইত্যাদি থেকে আপন সত্ত্বাকে পবিত্র রাখা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি নিমিত্তে সবধরণের কাজ আঞ্জাম দেওয়া। সত্যতার পয়গাম সকল ক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়া। রাসুল (সা.) এর একজন অনুসারী বান্দা বান্দি হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালে জান্নাত।’
তাকওয়া মানবজাতির জন্য অমূল্য রতন। তাকওয়াপূর্ণ জীবন জান্নাতি জীবন। এরই মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও সফলতার দুয়ার উন্মোচিত হয়। মহান প্রভুর সান্নিধ্য অতীব সহজ হয়। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীনদের প্রশংসা কুরআনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাতুন নাইম রয়েছে।’ (সূরা কলম: ৩৪)
পক্ষান্তর, যারা জাগতিক লোভে নিজ ইমানকে বিলিন করে দিয়েছে তাকওয়া নামক মহা সম্পদ খুব সহজের দূরে ছুড়ে ফেলেছে। আখেরাতের চিন্তা থেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার সতর্কবানী কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ রয়েছে। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।
দুনিয়ার পদেপদে তারা হয় লাঞ্ছিত, অপদস্থ। প্রতিটিক্ষেত্র হয় কঠোর থেকে কঠোর। মনে অশান্তির ছায়া পড়ে। কোথাও পায় না তারা আনন্দের ছিটেফোঁটা। আর পাবেইবা কিভাবে? তারা রয়েছে আল্লাহ তায়ালার নাফরমানির মোহে। ন্যায়ের রাস্তা ছেড়ে অন্যায়ের পথে। তাকওয়াপূর্ণ জীবন ভুলে গিয়ে প্রবৃত্তির জীবন বেছে নিয়েছে। সুতরাং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় মহান রাব্বুল আলামীন স্বয়ং পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য রাস্তা তৈরি করে দিবেন। (গুণাহ থেকে বেঁচে থাকার) এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দিবেন, যা সে কখনোই কল্পনাই করেনি।’ (সূরা তালাক: ২-৩) ‘হে ইমানদারগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সূরা আহযাব: ৭১) ‘নিঃসন্দেহ আল্লাহ তায়ালার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সে ব্যক্তি, যে সর্বোচ্চ খোদাভীরু।’ (সূরা হুজুরাত: ১৩) ‘যে ব্যক্তি ইমান গ্রহণ করলো এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তার জন্য দুনিয়াতেই সুসংবাদ রয়েছে।’ (সূরা ইউনুছ: ৬৩-৬৪)
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা এটিই প্রতীয়মান হয়, জীবন সুখি করবার জন্য তাকওয়ার বিকল্প নেই। তাই তাকওয়া একজন মুসলমানকে জান্নাতের পথে খুব দ্রুত নিয়ে চলে। হাদীসের আলোকে তাকওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতা কামনা করছি।’ (সহীহ মুসলিম: ১০৫৯) হযরত আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান বাহিলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বিদায় হজের ভাষণে বলতে শুনেছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করো, রমযানের রোজা রাখো, নিজেদের মালের যাকাত দাও এবং নিজেদের আমীরের আনুগত্য করো, তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযি শরীফ: ৫৫৯ )
তাকওয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য হওয়ার অনেক বড় এক মাধ্যম। বান্দা বান্দি অন্যান্য আমল দ্বারা এতো দ্রুত আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে না, যতদ্রুত তাকওয়ার মাধ্যমে পৌঁছে যায়। সুতরাং তাকওয়াপূর্ণ জীবন গড়ার জন্য প্রবৃত্তির কালো ছায়া থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হবে আপন সত্তার সঙ্গে, নিজ প্রবৃত্তির সঙ্গে। সুন্দর ও সাফল্যময় এবং আখেরাতে চিরস্থায়ী জান্নাতের মালিক হবার জন্য তাকওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাকওয়াপূর্ণ জীবন পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন!