প্রিয় নবী সা: এর হাসি ও কৌতুক
া আবু তালহা তারীফ
নবুয়াতের মহান দায়িত্ব পালনের মধ্যেও বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা:) অত্যন্ত হাসি খুশি এবং উৎফুল্ল থাকতেন। তাঁর কাজের সকল কঠোরতা ও জটিলতার মধ্যে সাধারণ ধর্মীয় নেতাদের মতো তাঁর সঙ্গে তাঁর প্রিয় সাহাবীদের নিকট কখনও একঘেয়ে নিরস মনে হত না। রাসুল (সা:) এর সঙ্গ ছিল আনন্দ ও কৌতুকোজ্জল। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) তার সাহাবিদের সঙ্গে হাস্য কৌতুক করতেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তারা হাস্য কৌতুক করতেন বটে কিন্তু তাদের অন্তরে ঈমান এত সুদৃঢ় ছিল যে তা পাহাড়ের চেয়ে অনেক বেশি ভারী ছিল। হজরত বেলাল ইবনে সাদ (রা:) বলেন, “তিনি তাদের (সাহাবীদের দেখছেন) পরস্পর হাস্যেজ্জল। কিন্তু রাতে তারা মৌন হয়ে যেতেন। জারীর ইবনে সামুরা (রা:) বলেন যে, তিনি যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেন সে দিন হতে প্রিয় নবীর দরবারে গেলে তিনি তাকে খোশ আমদেদ জানাতেন। তিনি আরো বলেন যে, তিনি কোন দিনই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে হাস্যবিহীন অবস্থায় দেখেননি। রাসুল (সা:) সবসময় মৃদু হাসি হাসতেন। রাসুল (সা:) উচ্চ আওয়াজে হাসি দিতেন না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায (রা:) বলেন, রাসুল (সা:) এর মতো এত খোজমেজাজী এবং হাস্যেজ্জল মানুষ আর দেখেননি। তিনি বলেন, “হজরত রাসুল (সা:) মৃদু হাসি ব্যতিত উচ্চ হাসি হাসতেন না”। (সুনানে তিরমিজী)
সাহাবীদের সাথে হজরত মুহাম্মদ (সা:) কখনো কখনো কৌতুক করতেন। হজরত আউফ ইবনে মালেক আশ আশজায়ী (রা:) বর্ণনা করেন যে, তিনি মহানবী (সা:) এর সঙ্গে তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণ করে। একদিন প্রিয় নবী (সা:) হজরত মুহাম্মদ (সা:) চামড়ার নির্মিত একটি তাবুকের মধ্যে ছিল। তিনি তাকে সালাম জানিয়ে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি সালামের জাওয়াব দিলেন আর বললেন ভিতরে প্রবেশ কর। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:) আমার সবটুকুই কি? তিনি বললেন, তোমার সবটুকুই। আমি তখন ভেতরে প্রবেশ করলাম। (সুনানে আবু দাউদ) হজরত আনাস (রা:) বলেন, “একদিন এক লোক এসে রাসুল (সা:) এর নিকট আরজ করল হে আল্লাহর নবী! আমার কোন সাওয়ারী নেই সুতারং চড়ে বেড়ানোর জন্য একটি সাওয়ারী দিন। হজরত রাসুল (সা:) বললেন, তোমাকে একটি উষ্ট্রির বাচ্চা দিব? লোকটি বললো, আমি উষ্ট্রির বাচ্চা দিয়ে কি করব, তখন রাসুল (সা:) বললেন, “এমন কোন উট আছে কি যে যা কোন উষ্ট্রীর গর্ভে হতে জন্মায়নি?”। (সুনানে আবু দাউদ)
রাসুল (সা:) এত প্রিয় মানুষ ছিল যে বৃদ্ধাদের সাথে কৌতুক করতেন। একদিন এক বৃদ্ধা এসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর নিকট এসে আরজ করল, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমার জন্য দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে জান্নাত নসীব করেন। রাসুল (সা:) বললেন,“কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসুল (সা:) এর কথা শুনে বৃদ্ধা মনে কষ্ট পেলেন। রাসুল (সা:) বুঝতে পেরে সাহাবীদের বললেন, তোমরা তাকে বলে দাও সে যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন সে বৃদ্ধা থাকবে না। বরং আল্লাহ সমস্ত জান্নাতি নারীকে ষোড়ষী কুমারীতে রূপান্তরিত করবেন। (সুনানে তিরমিজী)
একদিন হজরত আলী (রা:) মাটিতে শুয়ে ছিলেন। তার সারা শরীর ধুলাবালি মাখা ছিল। সে পথ দিয়ে যাওয়ার কালে এ দৃশ্য দেখে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর নজরে পরে । তিনি হজরত আলী (রা:) এর কাছে গিয়ে বললেন উঠ হে আবু তুরাব। আবু তুরাব অর্থ (মাটির বাপ)। এরপর হতে আবু তুরাব হজরত আলী (রা:) এর নাম, হয়ে যায়। একবার আবু হুরায়রা একটি বিড়ালকে আদর করতেছে দেখে আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, “তাকে দেখে আবু হুরায়রা বলে ডাক দেয় সেই থেকে তার নাম আবু হুরায়রা হয়ে যায়। এ কারণেই কম লোকই তার আসল নাম জানে না। তবে কৌতুক করতে গিয়ে কোন সাথীদের হাসেতে গিয়ে মিথ্যা বলা যাবে না। একদা কিছু সাহাবী রাসুল (সা:) এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা:) আপনি কি আমাদের সাথে হাস্য কৌতুক করেন। তিনি জবাবে বললেন আমি সত্য ব্যতিত মিথ্যা কিছু বলিন া”। (সুনানে তিরমিজী)
শিক্ষার্থী, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা