বাংলাদেশের সঙ্গে নৌ ও রেলপথে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব ভারতের ব্যবসায়ীদের
মাছুম বিল্লাহ : বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলপথে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওযায়ও উদ্বিগ্ন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নৌ ও রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির ব্যবসায়ীরা মনে করেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি করা দরকার। এজন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোকে কাজে লাগানোর কথা বলছেন তারা। বাংলাদেশ-ভারতের ৬শ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ (অর্ধেক) হয় স্থলপথে। কিন্তু দুই দেশের স্থলবন্দরগুলোর উভয় পাশেই মানুষের ঘনবসতির ব্যাপকতা, মূল সড়কও অনেক ছোট হওয়ায় সম্প্রতি স্থলপথে বাণিজ্য কমে গেছে।
সম্প্রতি সবচেয়ে বড় ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বেনাপোল-পেট্রাপোল (ভারত) স্থাপন করা হয়েছে। এই চেকপোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সংযুক্ত রয়েছে। এ ধরনের প্রথম চেকপোস্ট চালু করা হয়েছিল তারও কিছুদিন আগে দুই দেশের চুক্তিতে আগরতলা-আখাউড়া এলাকায়। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টের সবচেয়ে বড় সমস্যা উভয় পাশেই মানুষের ঘনবসতির ব্যাপকতা, মূল সড়কও অনেক ছোট। নদীর তীরও সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া অনেক সময় ছোটোখাটো আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যাও বাধা, হোক তা প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক কারণে; নিয়মিতই উভয় পাশে পণ্য আনা-নেওয়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
কলকাতাভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক পরিবহন কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, কলকাতা থেকে পেট্রাপোলের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু এতটুকু দূরত্বের শেষ ৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এখন ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। সবসময় যানজট, যা কয়েক মাইল ছাড়িয়ে পড়ে সীমান্তের দুই পারে। মালবোঝাই ট্রাকগুলো আটকে পড়তে বাধ্য হয়। ফলে ডেলিভারি শিডিউলকে করে তোলে অর্থহীন। উভয় দেশের অর্ডার বাতিল ও লোকসানের মুখে পড়ে আমদানি-রপ্তানি। এর সঙ্গে অবশ্যই যোগ হবে সময়, খাবার ও কয়েক মানুষের শ্রম ঘণ্টা। যা আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায় না।
স্থানীয় পণ্য পরিবহনকারীদের মতে, সাধারণভাবে বাংলাদেশের অংশের সড়কের অবস্থা ভালো। ভারতের ভেতরে অংশে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে সড়ক প্রশস্ত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চাপ দিয়ে আসছে, বেশ কয়েকটি প্রণোদনার প্রস্তাবও দিয়েছে। তবে সড়ক প্রশস্ত করা এবং সড়কের চারপাশ দখলমুক্ত করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব।
কিভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো যায় নিয়ে এখনো ভারতের বিশেষজ্ঞরা বিভক্ত। কয়েকজন মনে করেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি করা দরকার। এই মতের বিশেষজ্ঞরা দেরিতে হলেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা তুলে ধরেন। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ভারতে পণ্য পাঠানোর জন্য সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দর ব্যবহার প্রয়োজন পড়বে না। বাংলাদেশি জাহাজ এখন কলকাতা, হালদা, পারাদিপ ও অন্য বন্দরে সরাসরি আসতে পারে। একইভাবে ভারতের জাহাজগুলোও সরাসরি বাংলাদেশের বন্দরে যেতে পারে।
নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা হলো জ্বালানি খরচ কম। যেকোনো ধরনের ব্যাঘাত ও দূষণ এড়ানো যাবে। কয়েকটি পরিসংখ্যান অনুসারে, নৌপথে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সড়ক পথের তুলনায় ৩০ শতাংশ অর্থ কম লাগবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কলকাতা-হালদিয়াতে আরও বেশি জাহাজ গ্রহণের সামর্থ্য রয়েছে। যা এসব বন্দরের আর্থিক কার্যকারতা বৃদ্ধি করবে।
বিশেষজ্ঞদের আরেকটি দল মনে করেন, রেলপথে পণ্য পরিবহনই সবচেয়ে ভালো উপায়। দুই দেশের রেল যোগাযোগ রয়েছে। কুমিল্লা-ত্রিপুরা আগেই ছিল, কিছুদিন আগে কলকাতা-খুলনা চালু হয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেস নিয়মিতই ঢাকা-কলকাতা চলাচল করছে।
কলকাতায় কর্মরত এক মাল্টিন্যাশনাল এজেন্সির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ শৌনাক মুখার্জি বলেন, এসব সেবার মাধ্যমে যতবেশি সম্ভব পণ্য ও মানুষের পরিবহন নিশ্চিত করতে চুক্তি করা উচিত উভয় দেশের। যাতে করে সময়মাফিক ও টানা চলাচল অব্যাহত থাকে। তাৎপর্যপূর্ণ হলো কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ রয়েছে। যা স্থলপথের চেয়ে অনেক ভালো।
মুখার্জি জানান, দীর্ঘমেয়াদে যাত্রী ও কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলপথই সাশ্রয়ী হবে। আর তা নৌপথের চেয়েও দ্রুত হবে। দুই দেশের উচিত রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে কাজ করা। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ