সুপ্রিম কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের সাফাই ইউএনও সালমনের নিরাপত্তায় ২ ঘণ্টা হাজতে রাখতে হয়েছে
স্থানীয় এমপিসহ ৮০ আইনজীবী সালমনের বিরুদ্ধে ছিল
এস এম নূর মোহাম্মদ : আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর নয়, নিরাপত্তার কারণে তাকে ২ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই তার জামিন নামঞ্জর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা ঠিক নয়। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গতকাল রোববার বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন ওপরোক্ত ব্যাখা তুলে ধরেন। যার আদালতে গত ১৯ জুলাই ইউএনও তারিক সালমানের জামিন শুনানি হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পাঠানো জবাবে বলেন, দ-বিধির ১৮৬০ এর ৫০১ ধারায় সি.আর ৪২৭/২০১৭ মামলাটি দায়ের করা হলে গত ৭ জুন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে অভিযোগটি আমলে নিয়ে সমন ইস্যু করেন। ১৯ জুলাই ধার্য তারিখে আসামি জামিনের আবেদন করেন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দাখিলের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২০৫ ধারায় আবেদন করেন। অপরদিকে বাদী পক্ষ থেকে আসামিকে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়।
মামলাটির শুনানির সময় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বাদী অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজু নিজে এবং তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুছ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল কাদের এবং অ্যাডভোকেট আনিছ উদ্দিন আহম্মদসহ প্রায় ৮০ জন আইনজীবী। আর আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, শুনানির সময় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের উপস্থিতির মতো বারান্দা এবং রাস্তায় উৎসুক জনসাধারণ ও মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তাই সময় উৎসুক জনতার রোষাণল থেকে ইউএনও‘র ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শুনানি মুলতবি করা হয় এবং তার আইনজীবীর আবেদন মোতাবেক কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসতে বলা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ইউএনওকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ডক থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত অনাকাঙ্খিত পরিস্তিতি পরিহারের জন্যই তাৎক্ষণিক আদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। আর ওই পদক্ষেপ কারো প্রতি বিরাগের বশবর্তী না হয়ে বিচারিক মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্র ছাপানোয় মামলার আসামি হন বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমন, যিনি বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও। ওই মামলার ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মামলার বাদী বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনকে কারণদর্শাতে বলেছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। পরে এর জবাবও দেন তারিক সালমান। কিন্তু জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান চিঠিটি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠান। বিভাগিয় কমিশনার মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠান। সেখানে লিখা রয়েছে তারিক সালমানের বক্তব্য সন্তুষজনক নয়। এরজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত