উত্তম চরিত্র মানুষের মনুষত্বের মাপকাঠি
া মাহফুজ আল মাদানী
চরিত্র মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ। চরিত্রবান ব্যক্তি মানব সমাজে এক অতুচ্চ মর্যাদা লাভ করে। চরিত্রবান হওয়া ছাড়া মানুষ সমাজে অবয়বে মানুষ হলেও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গণ্য হয় না।
চরিত্র কাকে বলে ? ‘চরিত্র হলো এমন উত্তম স্বভাব যা মানুষকে মহৎ কর্মে উদ্বুদ্ধ করে’। অনেকে বলেন, ‘এমন উন্নত প্রশংসনীয় চরিত্র, যা মানুষকে পশুত্ব থেকে টেনে এনে সৃষ্টিকুলের সেরা আসন তথা আশরাফুল মাখলুকাতের মঞ্চে অধিষ্ঠিত করে। ‘যে চরিত্রে মনুষত্বের যাবতীয় উত্তম গুণাবলীর সমাহার ঘটে, তাকেই প্রশংসনীয় চরিত্র বলে’।
আবার কেউ কেউ এভাবে বলেন, ‘ইসলামী চরিত্রে বিভূষিত হওয়া এবং শয়তানী চরিত্র থেকে বিরত থাকার নামই উত্তম চরিত্র’। মোটকথা, ‘মানুষের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য সংশ্লিষ্ট আচার-আচরণ ও কার্যাবলীকে সুষ্ঠু, সুন্দর, ও যথাযথভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রতিপালন ও সম্পাদন করাকে উত্তম চরিত্র বলে’।
স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তিনি নিজেই বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণতা প্রদাণের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।
এজন্য তাঁর চরিত্রকে জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁর চরিত্র হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক পরীক্ষিত, নিরঙ্কুস নির্ভেজাল এবং প্রশংসনীয়। তাঁর সুমহান চরিত্রের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’ -(সুরা আল ক্বলম ঃ ০৪)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী না হলে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। কেননা, দুঃশ্চিরত্র ও মন্দ স্বভাবের লোকজন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত হারিছা ইবনে ওহাব (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, দুঃশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব ও কঠোরভাষী বেহেশতে প্রবেশ করবে না’ -(আবু দাউদ, বায়হাকী)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে পূর্ণ ঈমানদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ণ ঈমানদার সে যার চরিত্র সর্বোত্তম’। উত্তম চরিত্র মানুষের মনুষত্বের মাপকাঠি। এটি সমাজে মানুষকে প্রশংসিত ও প্রিয়ভাজন করে তোলে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই শ্রেষ্ঠ যার চরিত্র সর্বোত্তম’। সমাজের সর্বোত্তম ও প্রিয় হতে হলে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। নতুবা সমাজের মানুষজন ভিন্নচোখে দেখবে সবসময়।
সুন্দর চরিত্র আর সদ্ব্যবহারের অধিকারী সর্বোত্তম এবং পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার। এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘মুমিনদের মাঝে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ অধিকারী তারাই, যারা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী’।
উত্তম চরিত্র কী জিনিস ? সকল ভাল কাজই উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভূক্ত। আর সকল ভাল কাজই পূণ্যকাজ। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ‘হজরত নাওয়াস ইবনে সামআ’ন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, পূণ্য হলো উত্তম চরিত্র এবং পাপ হলো যা তোমার অন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং ঐ কাজ মানুষের মাঝে প্রকাশ হওয়াকে তুমি অপছন্দ কর’ -(মুসলিম)
উত্তম চরিত্রের কতিপয় দিকসমূহ :
উত্তম চরিত্রের বিভিন্ন দিক রয়েছে, যেগুলো নিজের সত্ত্বায় ধারণ করা জরুরী। যেমন : আল্লাহ তা’য়ালা ও বান্দার সাথে কৃত ওয়াদা পরিপূর্ণ করা, অভাবীদের দান-সাদকা করা, জীবনের সকলক্ষেত্রে জুলুম পরিহার করা, ওজনে কম-বেশী না করা, মানুষের ব্যাপারে সকল খারাপ ধারণা ও মিথ্যা তথ্য প্রদান পরিহার করা, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা এবং কৃপণতা বর্জন করা, লজ্জাশীলতা, ধৈর্য্য ধারণ করা, সহনশীলতা, বদান্যতা, সম্মান, জ্ঞান, বীরত্ব, তাওয়াক্কুল, ক্ষমাপরায়ণ হওয়া, দয়া করা, নিষ্ঠা, সততায় গুণান্বীত হওয়া, কৃতজ্ঞতা আদায় করা, ক্রোধ দমন করা, রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করা, দুঃ¯’ অসহায় নিঃস্ব ও বিধবার সেবা করা, প্রতিবেশীর হক আদায় করা, ছোটদের ¯েœহ করা এবং বড়দের সম্মান প্রদর্শন করা ইত্যাদি। এসকল কাজের মাধ্যমে সমাজের উত্তম চরিত্রের লোকদের কাতারে শামিল হতে হবে।
সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে উত্তম চরিত্রের লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। উত্তম চরিত্রধারী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলে দিন দিন সমাজ আরো নি¤œ পর্যায়ে পৌছঁতে বাধ্য। আমাদের সমাজকে আলোকিত করতে হলে দরকার উত্তম চরিত্র। যার বিশেষ তাগিদ প্রদান করেছেন আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আসুন আমরা উত্তম চরিত্রে ভূষিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করি।