ইসলামে দৃষ্টির সীমারেখা!
া কাউসার মাহমুদ
আমাদের চোখের দৃষ্টির সীমানা কি? অত্যন্ত জটিল ও গূঢ় একটি প্রশ্ন! শুনতেই যেন কেমন লাগে। কেমন যেন অবান্তর প্রশ্ন মনে হচ্ছে। আসলে না! বিষয়টি একেবারেই এমন নয়। বরং এ বিষয়টি, অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টির সীমারেখা কি? বা থাকলেও এর সীমানা কতটুকু! এটা অবশ্যই ভাববার, এবং খুব মনোযোগ দিয়ে এর সম্পর্কে জানা দরকার। আজকাল আমরা আমাদের দৃষ্টি তথা চোখের ব্যবহারে বড়ই উদাসীন। আমরা ইচ্ছে করেই আমাদের শরয়ী নিষিদ্ধ বিষয় সমূহে উৎসুক হয়ে দৃষ্টি রাখি। আমরা এটাকে খুব সামান্য থেকে সামান্য কিছু মনে করি। অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুই মনে করি না। আর এ সম্পর্কে আমাদের কোন ভাবান্তরও ঘটে না। অথচ এমন হওয়ার ছিলো না। এ বিষয়টা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সম্পর্কে কোরআান ও হাদীসে খুব জোর দিয়ে বলা হয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন: হে নবী আপনি মুমিনদের বলে দিন তারা যেন দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। (সূরা নুর, আয়াত নং: ৩০) এখানে আল্লাহ তায়ালা মুমিন’দের স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখে অর্থাৎ সাথে সাথে যেন সংযত করেও রাখে। এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। আর আমরা দেখতে পাই দৃষ্টির হেফাযতের মাধ্যমেই লজ্জাস্থানের হেফাযত করা সহজ। এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম ইবনে কাসীর বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ হল যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম করা হয়েছে বান্দা যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। হারাম জিনিস হতে চক্ষু নিচু করে নেয়। যদি আকস্মিকভাবে দৃষ্টি পড়েই যায় তবে দ্বিতীয়বার যেন দৃষ্টি না ফেলে।
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।’ (মুসলিম ৫৩৭২)। দৃষ্টি নিম্নমুখী করা, এদিক ওদিক দেখতে শুরু না করা, আল্লাহর হারামকৃত জিনিসগুলোকে না দেখা এই আয়াতের উদ্দেশ্য। হযরত বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা) হযরত আলী (রা) কে বলেন, ‘হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়।’ (আবু দাউদ : ২১৪৪)
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ দৃষ্টি’ বলতে বোঝায় যখন কোন ব্যক্তির চোখ অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন বেগানা নারীর উপর পড়ে যায়। এভাবে হঠাৎ করে চোখ পড়ে যাওয়াতে কোন গুনাহ নেই, তবে সাথে সাথে তার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু যদি সে এর পরও দেখা বন্ধ না করে, তাহলে সে এই হাদিস মোতাবেক গুনাহগার হয়ে যাবে। পুরুষরা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে, সব অবস্থায় নিষিদ্ধ জিনিস দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, যদি না একান্তই কোন বৈধ কারণ থাকে, যেমন, কোন সাক্ষ্য দেওয়া, চিকিৎসা, বিয়ের প্রস্তাব, আর্থিক লেনদেন এর সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় ইত্যাদি। এই সমস্ত ক্ষেত্রেও ঠিক ততটুকুই দেখা বৈধ ঠিক যতটুকু দরকার, এর বেশি নয়। অথচ আমাদের বড়-দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো: আজকাল এ গুরুত্ববহ ও ভীতিপ্রদর্শন মূলক বিষয়টির ক্ষেত্রে আমরা অবহলোর শেষ ধৃষ্টতা’টুকু দেখিয়ে যাচ্ছি। যার ফলাফল স্বরুপ আমরা পাচ্ছি আমাদের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়।
সমাজে ধর্ষণ, ইভটিজিং সহ নানাবিধ পাপ ও খারাপ অপকর্মগুলো বেড়েই চলছে আমাদের উদ্ধত পাপ দৃষ্টির কারণে।
পক্ষান্তরে, ইসলাম আমাদের এ দৃষ্টির সীমারেখাকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে কোথায় আমাদের জন্য দৃষ্টিকে অবনমিত করতে হবে,আর কোথায় আমাদের দৃষ্টিকে মেলতে হবে। মাহরাম, গায়রে মাহরাম তথা যাদের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ বৈধ, তাদের সাথে আমাদের দৃষ্টি বিনিময়ের অনুমতি দিয়েছেন। আর যাদের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ শুদ্ধ নয়,তাদের সাথে আমাদের দৃষ্টি বিনিময়ের অনুমতি দেননি। যেমন- যাদের সাথে শরীয়তে দেখা দেয়া বৈধ তারা হলো: মা, মেয়ে, বোন, স্ত্রী, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগ্নী এবং দুধ-মা, দুধ-বোন, শ্বাশুড়ী, দাদী-নানী ও বাঁদী।