আদর্শ মানব মহানবী (সা.)
া আহমদ আবদুল্লাহ
প্রিয়নবী (সা.) মানব জীবনের সর্ববিধ অনুকূল ও প্রতিকূল অবস্থায় নিপতিত হয়ে মনোবৃত্তিসমূহের সর্বাঙ্গীণ উৎকর্ষ সাধন ও নিজ জীবনে সর্বদিক নীতির পূর্ণভাবে বিকাশ লাভের সুযোগ পেয়েছেন। সুতরাং তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেণীর লোকের আদর্শ পদ লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। একাধারে তিনি অনাথের আদর্শ, উৎপীড়িত, নিপীড়িত, বিতাড়িত ব্যক্তির আদর্শ। সর্ববিধ দাম্পত্য জীবনের আদর্শ। তিনি সেনার সেনাপতির আদর্শ, ভৃত্যের আদর্শ। তিনি দাতা ও গ্রহীতার আদর্শ, ধনী-গরীবের আদর্শ। তিনি দয়া ও দানের আদর্শ, সৌজন্যের আদর্শ। তিনি চরিত্র ও মহানুভবতার আদর্শ, বীরত্ব ও সৎসাহসের আদর্শ। তিনি ধর্মপরায়ণতা ও বিভুনির্ভরশীলতার আদর্শ, আতেœাৎসর্গের আদর্শ। হজরত ইব্রাহীম (আ.)- এর বিভুপ্রেম, হজরত ইসমাইল (আ.)- এর ধৈর্য, হজরত মুসা (আ.)- এর সাহসিকতা, সহৃদয়তা, হজরত আইয়ুব (আ.)- এর সহিষ্ণুতা, হজরত দাউদ (আ:)- এর নির্ভীকতা, হজরত সোলাইমান (আ.)- এর সৌষ্ঠব, হজরত ইয়াহয়া (আ.)-এর অমায়িকতা এবং হজরত ঈসা (আ.)- এর ন¤্রতা একাধারে প্রিয়নবী (সা.)- এর মাঝে বিরাজমান ছিলো।
বিশ্বায়নের এ যুগে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ বাস করতে চাইলে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ ধারণে বিকল্প নেই। পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক জীবনসহ প্রতিটি পর্যায়ে মহানবী (সা.)- এর আদর্শ আমাদের সামনে আলোকবর্তিকার মত। ব্যক্তি, সমষ্টি ও আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তি বজায়, বাস্তবায়ন এবং মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে গেলে সবচেয়ে সহজ পথ হলো, রাসুল (সা.)- এর আদর্শের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। ইসলাম সামগ্রিকভাবে এবং চূড়ান্তভাবে শান্তি চায়।
এ শান্তি ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপ্ত। আর শান্তি সমঝোতা ও সমন্বয়ই আজকের বিশ্বের কামনা। যদিও বর্তমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ইসলামের এক জাতি, এক বিশ্বের তত্ত্বকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে ন্যায়-নীতি ও ন্যায়দ-ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিশাল এই শূন্যতায় একমাত্র ইসলামের রাসুল (সা.)- এর আদর্শিক, তাত্ত্বিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্বনেতৃত্বের উপাদান সরবরাহ করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। সুতরাং বর্তমান যুগ মানসকে রাসুলের আদর্শের দিক থেকে যতই দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেনো, আপন বিভায়, মহত্বে, গতিশীলতায় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইসলামি তথা রাসুলের আদর্শই হবে অনিবার্যভাবে একবিংশ শতাব্দীর অনুসরণীয় আদর্শ ও ধর্ম। একটি মানুষের সমগ্র কর্মময় জীবনের ছবিটি ফুটে ওঠে তার আপন চরিত্রে ও আদর্শে। আজ পর্যন্ত পৃথীবিতে এমন একজন মহা পুরুষ বা আল্লাহর দূত আসেননি, যার জীবন-কথা বা পুরো জীবনের আদি-অন্ত রাসুল (সা.)- এর মত বিশ্ব দুয়ারে এতোটা খোলামেলা। কোথাও যেন বিন্দুমাত্র গোপনীয়তা নেই। রাসুল (সা.)- এর চরিত্র ও আদর্শ সমগ্র মানবম-লীর ও অখ- মানবতার এক চূড়ান্ত উত্তরণ।
তিনি হলেন চির সত্যবাদী, চির বিশ্বাসী, তাই দুর্ধর্ষ আরব বেদুঈন পর্যন্ত তাকে এক বাক্যে আল-আমিন আখ্যা দিয়েছিলো। যখন তিনি এই উপাধি লাভ করেন, তখন তিনি নবী নন, রাসুল নন, ছিলেন সাধারণ একজন মানুষ। তবুও সমগ্র আরব তাকে একমাত্র আদর্শ ব্যক্তিরূপে গ্রহণ করে। রাসুল (সা.)- এর জীবন ছিলো বহুমুখী তথা সর্বমুখী।