খালেদার নির্দেশে সহায়ক সরকারের ইস্যুতে আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি
কিরণ সেখ : দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা দিলেই তা বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে নামবে বিএনপি। লন্ডনে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এ নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন। আর এজন্য দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মীমাংসা করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী এ ম্যাসেজ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে দলটির সিনিয়র নেতারা পৌঁছে দিচ্ছেন বলে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আছেন যারা বিষয়টা বুঝেন, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। সকলের মতামত নিয়ে এই রূপরেখা ঘোষণা করা হবে এবং কর্মসূচি দেওয়া হবে। এটা অর্জনে লড়াইয়েও সূত্রপাত্র হবে। আর এই লড়াইয়ে জনগণ আমাদের পাশে থাকবে। কারণ আমরা এ প্রস্তাব জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং জনগণের জন্য দিব। গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার এই সফর চিকিৎসার জন্য বলা হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আগ্রহ রয়েছে। কারণ লন্ডনে তার ছেলে এবং দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) তারেক রহমান রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে (ঈদ-উল-আজহারের পর) দেশে ফেরার কথা রয়েছে বেগম জিয়ার। দেশে ফিরেই বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে তার জন্য একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন বলে সূত্রটি জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা বিএনপি ও দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটার ওপর আমরা কাজও শুরু করেছি। আর বিএনপি চেয়ারপারসন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার করার পর আমরা জনগণের কাছে যাবো। আমরা প্রত্যাশা করছি, জনগণ বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে রাজপথে নামবে। কারণ দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছেÑ গত ৫ জানুয়ারি দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সুতরাং জনগণের তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে বিএনপিকেই সমর্থন দেবে বলে আমরা আশা করছি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আশা করি সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার পর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে রূপরেখার আলোকে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবে। অন্যথায় জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের রূপরেখা কী হয় সেটার জন্য আওয়ামী লীগ অপেক্ষা করছে। যদি আলোচনার মতো রূপরেখা বিএনপি দেয় তাহলে সেটা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে। সেই অনুযায়ী আলোচনা চলবে। আর আমরা চাই, একটা সমঝোতার প্রক্রিয়ায় আসুন। যে প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে উভয় দলই নির্বাচনে যেতে পারে। যদি আওয়ামী লীগ না মানে তাহলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটি আছে, তারা বসে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে, এটা ২০১৪ ও ১৫ সাল নয়, মামলা দিয়ে সকলকে ধরে রাখবে। কিছুটা হলেও আমাদের দল সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়েছে। বেগম জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী এই শক্তিশালী দল নিয়ে কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সহায়ক সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী ক্ষমতাসীনরা আলোচনার উদ্যোগ না নিলে তখন বিএনপির আন্দোলন ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ থাকবে না। আর সরকার যদি ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি আবর্জনা মার্কা নির্বাচন করতে চায় তাহলে জনগণ নিয়ে বিএনপি রাস্তায় নামবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ