‘বিচার বিভাগের স্বার্থে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবে প্রধান বিচারপতি’
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দেশে সব সেক্টরেই উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বিচার বিভাগকে আস্তে আস্তে কুইজ করে একেবারে জিরোতে নেওয়া হচ্ছে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সরকার যদি মনে করে প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তাহলে আমি বলব হ্যাঁ, প্রধান বিচারপতি বিচারবিভাগের স্বার্থে রাজনৈতিক বক্তব্য দিবেন। বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতি আরও বলবেন। এ ব্যাপারে আমি দ্বিধান্বিত হব না।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে গতকাল শনিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এ সম্মাননার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজিনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিসহ নারী বিচারকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেক জেলাতেই স্থান সংকটের কারণে বিচারকদের এজলাস ভাগ করে বসতে হয়। গত ৩ বছরে বিচার বিভাগের আইন বিভাগে উন্নয়ন খাতে যে বাজেট তার সবচেয়ে কম টাকা খরচ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় কোনো মতেই প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেটের ৫০ থেকে ৫৫ ভাগের বেশি খরচ করতে পারে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উন্নয়ন বাজেটের সবটুকু সুষ্ঠুভাবে খরচ করার জন্য। এজন্য সচিব পর্যায়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু বিচারবিভাগের জন্য কে করবে?
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমরা আগেই বলে এসেছি যারা সিনিয়র জাজ, তাদের আইন মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হোক। ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিংগুলোর কাজ শুরু হওয়ার পর ২/৩ বছর ধরে আটকে আছে। আমি আশা করব, আইনমন্ত্রী দেখবেন আমাদের উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ হয়, তার ১০০ ভাগ না হলেও ৭০-৮০ ভাগ যাতে খরচ হয়। যাতে ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিংগুলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি। এখন যে অবস্থায় চলছে সেভাবে হলে ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং সম্পন্ন হবে না।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গত ৩ বছরে উন্নয়নের জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ হয়নি। যদিও এবার বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের বরাদ্দের জন্য। এবার জাতীয় সংসদের জন্য উন্নয়ন খাতে ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়নি। এবারের বাজেটে প্রশাসনের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে ১০.২৪ পার্সেন্ট। অনেক জেলা জজ জীবনবাজি রেখে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেন। তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এবার সারাদেশে নিরাপত্তার জন্য যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে সেখানে বিচারবিভাগের জন্য আলাদা যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা মাইনাস ০.১৪ পার্সেন্ট, অর্থাৎ কম দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি সুুরেন্দ্র কুমার সিনহা আরো বলেন, এবার বাজেট পর্যালোচনা করে আমি মর্মাহত হয়েছি। হাইকোর্টে যারা ডেথ রেফারেন্স করছে তারা চায় নিরাপত্তা। অনেক জেলায় গেলে বিচারকরা নিরাপত্তার কথা বলে, আমি জবাব দিতে পারি না। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে বিচার বিভাগ কি রকম চলবে। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, হাইকোর্টে আমাদের একটা রেওয়াজ চলে আসছে, পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট আসলে ইচ্ছামতো বিচারক নিয়োগ দেয়। যেহেতু আমাদের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। এটা ঠিক না। আমাদের হয়তো সময় চলে আসছে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে কতজন বিচারক থাকবেন সেটা নির্দিষ্ট করার। সংখ্যা যদি নির্ধারণ হয়ে যায় তাহলে পলিটিক্যাল ইন্টাফেয়ারেন্সটা কমে যায়। বিচার বিভাগে যত পলিটিক্যাল ইন্টারফেয়ারেন্স থাকবে না, ততই বিচারবিভাগের জন্য মঙ্গল। এ সময় আপিল বিভাগে আরও ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আদালত ভবনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের মূল যে হাইকোর্ট বিল্ডিং, এটাতে বৃষ্টির দিনে পানি চুইয়ে পড়ে। একেবারে আমি যে চেয়ারে বসি সেই চেয়ারে। আমি যে চেম্বারে বসি সে চেম্বারে পানি পড়ে। আদালতের রেকর্ড রুমে পানি পড়ে। এটা আগে থেকেই ভঙ্গুর অবস্থা, ৪০-৪৫ জনেরও বেশি বিচারকের কোনো চেম্বার নেই। এখন তাদের বারান্দায় বসতে হচ্ছে।
এ সময় তিনি আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের যে ভঙ্গুর অবস্থা ৫-৬ বছরের বেশি হবে না, এটি ভেঙে ফেলতে হবে। এটা যদি ভেঙে পড়ে তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে এটা বলা মুশকিল। তখন মাঠে বসে বিচার করতে হবে।
বিচারকদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি এর জন্য জুডিসিয়াল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করার জন্য প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে হলেও জমি চান। যাতে বড় পরিসরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ