পাকিস্তানের সবাই কি সৎ ও ধার্মিক, প্রশ্ন নওয়াজের
লিহান লিমা : পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, পাকিস্তানের সবাই সৎ ও ধার্মিক কি না?
শনিবার পাঞ্জাব হাউজে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) দলের নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্যদের সভায় নওয়াজ বলেন, আমি কখনো বেতন নেই নি। আমি এমন কিছুই নেই নি যার ওপর আমার আইনি অধিকার নেই। আমি আমার বিবেকের কাছে স্বচ্ছ। আমার সেবার জন্য আমি পুরস্কার বা সম্মান চাইনি। তবে আমি কখনো এমন ‘মর্যদাহানিকর আচরণ’ প্রত্যাশা করি নি। দেশের ২০ কোটি লোকের নির্বাচিত কারো প্রতি এই আচরণ সত্যিই অপ্রত্যাশিত। অন্তত আমি জাতিকে যা দিয়েছি তা স্বীকার করা উচিত ছিল।
এদিকে আদালত কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় জেলেযেতে হতে পারে নওয়াজকে। কারণ দেশটির সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার যে রায় দিয়েছেন তা কোনো গতানুগতিক রায় নয়। নওয়াজ শরীফ কতদিনের জন্য অযোগ্য থাকবেন রায়ে তা পরিষ্কার করে বলা হয় নি, তবে বহু আইন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন- এ রায় যাবজ্জীবনের জন্য।
স্বাভাবিকভাবে কোনো সাংসদের জমা দেয়া মিথ্যা তথ্য অথবা ভুল ঘোষণার বিচার হয় পাকিস্তানের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরওপিএ)-১৯৭৬’র ৭৮ ধারা অনুযায়ী।
একই আইনের ৮২ ধারায় দুর্নীতির অভিযোগে দ- দেয়া হয়। এ ধারা অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি তিন বছরের কারাদ- অথবা পাঁচ হাজার রুপি জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আরওপিএ’র ৯৯(এফ) ধারা এবং সংবিধানের ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অযোগ্য ঘোষণা করেন দেশটির শীর্ষ আদালত।
২০১৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল এফজেডই’র চেয়ারম্যান পদে থাকার তথ্য গোপন করেন নওয়াজ। এ অভিযোগে পাক সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তাকে দেশটির সরকারি কোনো অফিসের দায়িত্বে অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, আদালতের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, নওয়াজ শরিফ ‘ক্যাপিটাল এফজেডই’র পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে বেতন নিয়ছিলেন কি না। এছাড়া বেতন না নেয়া হলে তা পাওনা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে কি না, যা ১৯৭৬ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরওপিএ) ১২(২) ধারা অনুযায়ী ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক। এ ঘোষণা দিতে না পারাটা প্রধানমন্ত্রীর অযোগ্যতা।
আদেশে আরও বলা হয়, ১৯৭৬ সালের আরওপিএ’র ৯৯(১)(এফ) ধারা ও পাকিস্তানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারা মোতাবেক নওয়াজ অসৎ। অতএব তিনি মজলিস-ই-শূরা (সংসদ) সদস্য পদে থাকার অযোগ্য।
উল্লেখ্য, শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এই নিয়ে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি। পদত্যাগের পর রোববার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ত্যাগ করেন নওয়াজ। কড়া নিরাপত্তায় স্ত্রী কুলসুম ও কন্যা মরিয়মসহ নওয়াজ পরিবারকে পাকিস্তানের বিখ্যাত শৈলশহর মুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের রক্ষী ও কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন নওয়াজ শরিফ। সূত্র : ইকনোমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সম্পাদনা : আবু সাইদ