হোঁচট খাবে বাজেট অর্থায়ন গ্যাসের দাম স্থগিত হওয়ায় বছরে আয় কমবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা
হাসান আরিফ : বাস্তবায়নের দুই মাসের মাথায় দ্বিতীয় ধাপে বাড়ানো গ্যাসের দাম আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। এতে সরকারের এই খাতে বছরে আয় কমবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আয়কৃত এই টাকা থেকে ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা বাজেট অর্থায়নে ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিল। ফলে বাজেট অর্থায়নেও হোঁচট খাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় মূল্যবৃদ্ধির আদেশ কার্যকর হওয়ার ফলে বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হতো ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এর ৮১ শতাংশ অর্থ যেত সরকারি কোষাগারে। বাকি ১৯ শতাংশ অর্থ যেত সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানির কোষাগারে। অন্যান্য কোম্পানির আয় দিয়ে সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হবে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। দুই ধাপে তারা ৮ খাতে গড়ে ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ দাম বাড়ায়।
১ মার্চ থেকে প্রথম দফার দাম কার্যকর হলেও আদালতের রায়ে আটকে যায় দ্বিতীয় দফার (১ জুন) দাম। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে আবার সে আদেশ স্থগিতও হয়ে যায়। ফলে বিইআরসি তখন বলে, এই অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়াতে আর কোনো বাধা নেই। এরপর ১ জুন থেকে গ্যাসের দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়ানো কার্যকর হওয়ায় দুই চুলার দাম হয়েছিল ৯৫০ টাকা আর এক চুলা ৯০০ টাকা। গতকাল দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো গ্যাসের দাম আদালত অবৈধ করায় গতকাল থেকেই দাম কমে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য হয় ৮০০ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা।
মার্চের আগে এক চুলার জন্য ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা দিতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে এক লাফে দাম বেড়ে গিয়েছিল ৩০০ টাকা।
পাশাপাশি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম দুই ধাপে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করার পরও সরকার তিন মাসের ব্যবধানে গ্যাসের দাম পরপর দুই দফায় বাড়ানোর অযৌক্তিক আদেশ চাপিয়ে দিয়েছিল। যা ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। এর নেতিবাচক প্রভাব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপরও পড়েছে। বেড়ে গিয়েছিল পণ্যের উৎপাদিত মূল্যও।
শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাসভিত্তিক শিল্পে গ্যাসের দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা থাকা উচিত। এটি নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হয়।
ব্যবসায়ীদের হিসেবে, গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটর দিয়ে স্পিনিং মিলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়ে ৪ টাকা ২০ পয়সা। দাম বাড়ানোর ফলে দাম পড়েছিল সাড়ে ৯ টাকার বেশি।