জিয়া নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন : প্রধানমন্ত্রী
আনোয়ারুল করিম : ‘সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে বললেন, আপনি তো অসুস্থ, দায়িত্ব ছেড়ে দেন। সায়েম বললেন, না আমি ঠিক আছি। কিন্তু জিয়া এরপর অস্ত্রের মুখে সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে জিয়া হাজার হাজার সৈনিক-সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। রক্তের মধ্যে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু সেই দেশ আবার চলে গেল পরাজিত শক্তির হাতে।’ শোকাবহ আগস্টের প্রথমদিনে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষকলীগ শোকাবহ আগস্ট স্মরণে এ রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ‘রেপড’ হওয়া মা-বোনদের সন্তানদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একটি নতুন দেশ, যা ছিল পাকিস্তানের একটি প্রদেশ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দেশটিকে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি কালো দিবস। যদি বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতেন, যদি ১৫ আগস্ট না আসতো, তবে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত পেত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আকাক্সক্ষা নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি, এর মাধ্যমে এতটুকু হয়েছে যে যারা খেতে পারতেন না, তারা এখন অন্তত একবেলা হলেও খেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এদেশের মানুষ সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ পেয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নই এটা ছিল, যা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। জাতির পিতা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তের ঋণ শোধ করে গেছেন। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তার মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিব্বত ৫৭০ সাবান দিয়ে তার মরদেহ গোসল করানো হয়। তাকে দাফনও করা হয় রেডক্রিসেন্টের হাসপাতালে থাকা রিলিফের কাপড় দিয়ে। অর্থাৎ তিনি কিছুই নিয়ে যাননি। তিনি বলেন, যখন দেখি এদেশের মানুষ ভালো আছেন, তখন আমি মনে করি নিশ্চয়ই বেহেশত থেকে আমার আব্বা-আম্মা দেখছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এদেশের কৃষক ও শ্রমিকদের মর্যাদা দেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মানুষ ও তাদের কিছু চাটুকার ছাড়া ২১ বছর এদেশের মানুষ শোষিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন এদেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন তিনিই শুরু করেছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের আগস্টের এই দিনে জার্মানিতে বসে শুনলাম, আমাদের কেউ নেই। জিয়াউর রহমান শেখ রেহানার পাসপোর্ট নবায়ন করতে দেননি। ভারতের নয়াদিল্লিতে যখন ছিলাম, তখন হাইকমিশনার শামসুর রহমান সাহেব, যিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ছিলেন, তিনি কাউকে কিছু না বলে আমাদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ