প্রিয় স্বাধীনতা আজ তুমি কোথায়?
অ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, বিশেষ করে র্যাব ও পুলিশের অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, অনৈতিক ও মাদকসহ বেআইনি কাজে জড়িত থাকার কথা পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়। অনেক খবর অজানাই রয়ে যায়, যা পত্রিকার পাতা পর্যন্ত আসে না। সম্প্রতি একটি সংবাদ, তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে চোখের চিকিৎসার জন্য সরকার ভারতের চেন্নাই পাঠিয়েছে। বিমানবন্দরে সিদ্দিকুর রহমানের সাক্ষাৎকার মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে এ মর্মে যে, সে রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এজন্য যে, রাষ্ট্র উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠিয়েছে। সঙ্গে এক বৃদ্ধার কান্নাও দেশবাসী শুনেছে। বৃদ্ধা মহিলা, সিদ্দিকুর রহমানের মা, খালা, নানি, দাদি যেকোনো একটি সম্পর্কের হতে পারে, যিনি অতি কষ্টে তাকে লালন-পালন করেছে, যার আশা ছিল যে আরও দশজনের মতোই সিদ্দিক সংসারের সহায়ক শক্তি হিসেবে সকলের মুখ উজ্জল করবে। মহিলার বেশভূষণ দেখে মনে হয় যে, তারা কোনো সচ্ছল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়। কে এই সিদ্দিকুর রহমান, কেনই বা তার চোখ নষ্ট হতে হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে! খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০/৪/২০১৭ তারিখে রুটিন ও সেশন জট নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ করে পরীক্ষার বর্তমান কর্ণধার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে স্মারকলিপি দিতে শাহবাগ মোড়ে সমবেত হয়েছিল।
ছাত্রদের কি অপরাধ ছিল যেখানে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসা বা অফিস থেকে অনেক দূরে শাহবাগ মোড় যেখানে একটি পুলিশ স্টেশন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহির্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রদের তিনি যদি দাবি-দাওয়া শোনার ধৈর্য হারিয়ে ফেলে থাকেন তবে তাদের পরীক্ষার দায়িত্ব নিলেন কেন? পত্রিকায় প্রকাশ পুলিশ ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেল থেকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেনি বরং আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সরাসরি নিক্ষেপ করেছে যাতে মনে হচ্ছে যেকোনো যুদ্ধ ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধে শত্রু দমনে পুলিশ মাঠে নেমেছে। পত্রিকার ভাষ্য ও টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, শাহবাগে অনধিক ২০০ ছাত্রের সমাবেশ হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ১২০০ জন অজ্ঞাত নাম দিয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, টিয়ারগ্যাস খেয়ে চোখ হারাল ছাত্ররা এবং মামলাও খেল ছাত্ররা। যে পুলিশ কাঁদানি গ্যাস নিক্ষেপ করেছে তারা রয়ে গেল দুধে ধোয়া তুলসি পাতা।
দেশ চালায় রাজনৈতিক দল। কিন্তু বিরোধী দলকেও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হয়, তাই বলতে হয় ‘স্বাধীনতা’ তুমি কোথায়? ব্রিটিশ, পাকিস্তান একটি নির্জীব যন্ত্র হিসেবে যেভাবে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে, বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সভা, সমাবেশ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করা প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সে অধিকার আজ পুলিশের বুটের নিচে পিষ্ট হয়ে গেছে। তাই গলা ফাটিয়ে আর্তনাদ আসে হে মহান ‘স্বাধীনতা’ তুমি কোথায়? লেখক : কলামিস্ট ও সাবেক সিনেটর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়