ইসলামে দৃষ্টির সীমারেখা
কাউসার মাহমুদ
গতপর্বের পর
এ কথার প্রেক্ষিতে একদল অনুসন্ধানী এ যুক্তির সিড়ি দাঁড় করাবে যে, আমরাতো মানুষ আর একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের দৃষ্টি বিনিময়ে বাধা কেন? আমরা আমাদের ইচ্ছে মতো যত্র, যাহাতে, তাহাতে, আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবো! এ ক্ষেত্রে শরীয়তের এ সীমারেখা আমাদের মৌলিক ও স্বাভাবিক বিষয়ে আঘাতে করছে বৈ কি? এবং ক্ষেত্র বিশেষ দৃষ্টির সীমানায় এসে তাদের কেউ সমঅধিকারের বিষয়টি খুব শক্ত করে দাড় করাতে চাইবে! আমরা এ বিষয়ের নিগূঢ় আলোচনা করতে চাই। তা হলো, পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকের একটা পরিবার আছে। যেটাকে আমরা পারিবারিক সংগঠন বলি। আর এ পারিবারিক সংগঠন সৃষ্ট ও সৃষ্টির পর এ পারিবারিক সংগঠনের প্রধান স্তম্ভ দুই বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষ।
স্বাভাবিক ভাবেই বিপরীত লিঙ্গের দু’জন একজন আরেকজনকে অনুভব করে। যেটা প্রকৃতজাত এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী শুধু শুদ্ধ’ই নয় বরং পূণ্যের কাজও বটে।
ঠিক তেমনি মানুষ ও অন্যান্য সকল প্রাণীই তার বিপরীত লিঙ্গ’কে আকর্ষণ করে। অতএব বিবাহের আগেও বিপরীত লিঙ্গে মানুষের এ আকর্ষণ-অনুভব প্রাকৃতিক সহজাত। আর এ আকর্ষণের ফলেই ছেলে মেয়ে দুটি বিপরীত লিঙ্গ তারা একে প্রত্যেকের অনুভব হওয়াটাও স্বাভাবিক। ঠিক এহেন পরিস্থিতিতে তাদের মাঝে দৃষ্টির সীমারেখা শরয়ী বিধান যদি প্রয়োগ না করা হয় তাহলে এ বিষয়টি অবাধ মেলামেশার কোন স্তরে গিয়ে ঠেকবে তা সহজেই অনুমেয়।
আর এ দৃষ্টি সীমারেখা, নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, বয়োবৃদ্ধ-সকলের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। এতদাসত্বেও সবকিছু ছাপিয়ে দৃষ্টিকে সংযত না করার প্রথম বিপদ হিসেবে আমরা দেখি ‘ইভটিজিং’ এবং এর পরবর্তী স্টেজ ধর্ষণে গিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের সবচেয়ে করুণ চিত্র গুলোর একটি আমাদের সামনে ফুটে ওঠে।
এ কথার সূত্র ধরেই ইসলাম নারীদের নিজ সত্বাকে ঢেকে রাখা এবং বেগানা পুরুষের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। কারন তার খোলামেলা চলন-বলন স্বভাবতই তার বিপরীত লিঙ্গের লুিপ্সার মূল হয়ে দাড়ায়। এখন এ ক্ষেত্রে যদি আওয়াজ তোলা হয় তাহলে মৌলিকভাবে দুটি প্রশ্ন আসে। ১. নারীরা কি কোঠারাবদ্ধ হয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখে জীবন যাপন করবে?
২. আর পুরুষের মনে এ লিপ্সাই বা কেন জন্মায় যে, সাধারণ একজন নারীকে দেখার মাধ্যমে তার আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে হয়! এবং তার ভেতরের কামোদ্দীপক ভাব চলে আসে। সে কেন পৃথিবীর প্রত্যেকটা মেয়েকে তার নিজ মা, বোন ভাবতে পারে না। এর উওরে প্রথমত: এটা বলতে চাই এটা খুব সাধারণ একটা অযৌক্তিক প্রশ্ন। কারণ আমরা শুরুতেই বলে এসেছি প্রত্যেকটা সৃষ্টিই তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেম অনুভব করে। ঠিক তেমনিভাবেই প্রত্যেকটা পুং লিঙ্গ তার বিপরীত স্ত্রী লিঙ্গকে অনুভব করে। এবং একটা স্ত্রী লিঙ্গ একজন পুং লিঙ্গকেই অনুভব করবে। অবশ্যই তার স্বজাত মানুষ ভিন্ন অন্য কোন প্রাণীকে নয়। অতএব অনুভবের বিষয়টা একেবারেই প্রকৃতিগত ও স্বাভাবিক-সহজাত বিষয়।
আর এ সহজাত বিষয়টার অবতার ও সূচনা হয় একজন বেগানা নারীকে দেখার মাধ্যমে। ‘দৃষ্টির’ সীমালঙ্ঘনের কারণে। কিন্তু পক্ষান্তরে নারীরা যদি আবৃত্ত হয়ে চলে। তাহলে এখানে আমরা তাদের আবৃত্ত হয়ে চলনের ফলস্বরুপ দেখতে পাই তাদের প্রতি স্বভাবতই সকল পুরুষের শ্রদ্ধার অবনমিত দৃষ্টি। এবং তাদের নিজেদের হেফাযত। আর এ কথা আজ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করে বলা যায় একজন সঠিক পর্দানশীন নারী একজন বেপর্দা নারীর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ও সম্মানের সাথে জীবন যাপন করে। কেননা একজন পুরুষ বা নারী চারিত্রিক দিক থেকে সে নিজে যেমনই হোক না কেন, প্রত্যেকেই চায় আমার জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনি সত্যিকারের সৎ ও বিশুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হোক। আর দৃষ্টির হেফাযত’ই এ নিশ্চয়তা প্রাপ্তির প্রধান সোপান।