আল আকসার প্রতি ভালোবাসা
মিযানুর রহমান জামীল
মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের দখলদারিত্ব প্র্রতিষ্ঠার নতুন তৎপরতা শুরু হয়েছে। আগে বিভিন্ন অজুহাতে মসজিদটিতে নিয়ন্ত্রণ প্র্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল ইসরাইল; কিন্তু এবার সরাসরি অ্যাকশনে নেমেছে ইহুদিবাদ। পরপর দুই শুক্রবার আল আকসায় জুমার নামাজ আদায় করতে দেয়া হয়নি মুসলিমদের। প্রতিবাদে বিক্ষোভ করা লোকদের ওপর চালানো হয়েছে গুলি। নিরাপত্তার নামে বিশ্ব মুসলিমের তৃতীয় পবিত্র এ স্থানটিতে বসানো হয়েছে সেনাপাহারা, নজরদারি ক্যামেরাসহ নানা সামগ্রী। আল-আকসা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, পুরো মুসলিম উম্মাহর কাছেই পবিত্র একটি স্থান। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অত্যন্ত নিন্দনীয় এ ঘটনায় অনেকটাই নীরব রয়েছে মুসলিম বিশ্ব। দু-একটি দেশ ছাড়া কেউ এগিয়ে আসছে না ইসরাইলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদ করতে। তবে বসে নেই সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। বুকের রক্ত দিয়ে তারা পবিত্র আল-আকসার সম্মান রক্ষায় লড়াই করে যাচ্ছেন।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে জেরুসালেম ইসরাইলের দখলে। কিন্তু এর আগে কখনো আল-আকসা বন্ধ করে দেয়ার নজির নেই। আল্লাহর প্রকৃত বিধান থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের উপর এ পরিস্থিতিকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্ষার জন্যে? যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক! জালেমের এই জনপদ থেকে আমাদের উদ্ধার কর। তোমার কাছ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও। [সূরা নিসা, আয়াত : ৭৫]
আগের আয়াতে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসের কারণে জিহাদে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই আয়াতে মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বলা হচ্ছে- যারা অত্যাচারীদের হাতে নিপীড়িত তাদেরকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করা উচিত এবং নীরব থাকা উচিত নয়। এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, জালেমদের হাত থেকে নিপীড়িত লোকদের রক্ষা করা ও তাদের মুক্তি দেয়া ইসলামী সংগ্রাম তথা জিহাদের অন্যতম উদ্দেশ্য মজলুমদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের শামিল। স্বধর্মী ও স্বজাতির প্রতি মুমিনের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। স্বদেশ ও স্বধর্মের লোক যখন কষ্ট পাচ্ছে তখন শুধু নিজের এবং পরিবারের সুখের চিন্তা করা মুমিনের লক্ষণ নয়।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে, প্রথমত : ইসলামী জিহাদ শুধু ধর্মের স্বার্থেই হয় না, মানবীয় স্বার্থ রক্ষাও এর লক্ষ্য। মানুষকে মুক্তি দেয়ার সংগ্রাম ধর্মেরই সংগ্রাম। দ্বিতীয়ত : মজলুম ও নিপীড়িত জনগণের ফরিয়াদ এবং কান্নার ব্যাপারে উদাসীন থাকা একটি বড় পাপ। সাহস ও শক্তি নিয়ে মজলুমের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। সূরা নিসার ৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা অবিশ্বাসী তারা তাগুত বা অসত্যের পক্ষে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের অনুসারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর নিশ্চয় শয়তানের কৌশল দুর্বল।’
ইসলামী জিহাদ ও অবিশ্বাসীদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করার জন্য মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলছেন, ‘ঈমানদাররা শুধু আল্লাহর ধর্ম রক্ষা এবং তা শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে, ক্ষমতা বা পদের জন্য নয়। মুমিনের জন্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি যথেষ্ট। কিন্তু কাফেররা খোদাদ্রোহী শক্তি ও জালেমদের শাসন শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে।
তাদের লক্ষ্য অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করা এবং নিজ দেশের সীমানা বৃদ্ধি করা।’ এরপর আল্লাহ আধিপত্যকামী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহ যুগিয়ে বলছেন, ‘তোমরা মনে করো না যে, কাফেররা শক্তিশালী ও তোমরা দুর্বল; বরং বাস্তবতা এর বিপরীত। তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমানের কারণে সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী। অন্যদিকে তোমাদের শত্রুরা শয়তানের অনুসারী বলে অত্যন্ত দুর্বল। তাই কাফের ও তাগুতি শক্তির সাথে সংগ্রাম করতে ভয় পেয়ো না এবং সর্বশক্তি দিয়ে কুফরি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ কর। তোমরাই শ্রেষ্ঠ এবং শয়তানের অনুসারীরা আল্লাহর ইচ্ছার মোকাবেলায় অত্যন্ত দুর্বল ও অক্ষম।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, প্রথমত : ফি সাবিলিল্লাহ অর্থ-আল্লাহর পথে থাকা। জীবনের সব ক্ষেত্রে এটাই মুমিন ও ইসলামী সমাজের লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত : ঘরে বসে থাকা এবং উদাসীনতা মুমিনের লক্ষণ নয়; বরং খোদাদ্রোহী ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামই মুমিনের লক্ষ্য। তৃতীয়ত : কাফের, তাগুত বা ইসলামবিরোধী স্বৈরশক্তি ও শয়তান এরা একই ত্রিভুজের তিন দিক এবং এগুলো একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। আর এ জন্যই এগুলো একে অপরকে শক্তিশালী করার জন্য সচেষ্ট।
পবিত্র কুরআনের আরেক জাগায় বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্যুকে আকড়ে ধরো।’ আল্লাহ তাঁর ঘরকে হেফাজতের মাধ্যমে আমাদের হেফাজত নিশ্চিত করুন।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক আর রাশাদ