আহমদ উল্লাহ
নামাজ আমরা অনেকেই পড়ি। কিন্তু সব নামাজের মান সমান নয়। কেউ নামাজ পড়েন মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতার মানসিকতায়, কেউ পড়েন গুরু দায়িত্ব মনে করে, কেউ পড়েন ঝামেলামুক্ত হওয়ার জন্য। ইমাম ইবনু ক্বাইয়িম আল জাওযিয়া (রহ:) বলেন, নামাজ আদায় করতে গিয়ে মানুষ ৫ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়। ১. আল্লাহর ভর্ৎসনাপ্রাপ্ত: যার নামাজের কারণে সে আল্লাহর ভর্ৎসনা ও শাস্তির উপযুক্ত হয়। ২. আল্লাহর জবাবদিহিতার মুখোমুখি: যার নামাজের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। ৩. ক্ষমাপ্রাপ্ত: যার নামাজের বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার পাপরাশী ক্ষমা করে দেন।
৪. সাওয়াব অর্জনকারী: যে তার নামাজের বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব বা পুণ্য অর্জন করে। ৫. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত: যে তার নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।
আল্লাহর ভর্ৎসনাপ্রাপ্ত মুসুল্লী হলেন তিনি, যে নামাজের বিষয়ে যতœশীল না। পবিত্রতা অর্জন এবং নামাজের রোকন, ওয়াজিব ও শর্তসমূহ যথানিয়মে পালন করেন না। তিনি নামাজের মাধ্যমে ভর্ৎসনা ও সাজার উপযুক্ত হন। আল্লাহর জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবেন সে মুসুল্লী, যিনি নামাজের রোকন, ওয়াজিব এবং শর্তসমূহ যথাভাবে পালন করেন ঠিক; কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নামাজে যা বলেন বা করেন তিনি সবই অবচেতন মনে। সালাম ফিরানো পর্যন্ত পুরো সময়জুড়ে তিনি অন্য জগতে বিচরণ করে বেড়ান। বরং কোন কাজের তাগাদায় নামাজ থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য ছটফট করতে থাকেন।
সেই মুসুল্লী তার নামাজের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্ত হন, যার নামাজের রোকন ওয়াজিব ও শর্ত বই ঠিক থাকে। নামাজ শুরুর পর থেকে তিনি প্রবৃত্তি ও শয়তানের সাথে লড়াই করে মনযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেন। আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখেন যেন শয়তান তার নামাজ নষ্ট করতে না পারে। এক কথায় তিনি নামাজের মান সুন্দর রাখার জন্য নফসের সঙ্গে জিহাদে অবতীর্ণ হন। এ ধরণের নামাজী নামাজের বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হন।
নামাজের বিনিময়ে ক্ষমার পাশাপাশি বিশেষ সওয়াব অর্জনকারী মুসুল্লী হলেন তিনি, যে আরকান, ওয়াজিবাত ও শর্তসমূহ এবং মনযোগের সাথে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন। সর্বোচ্চ শ্রেণির মুসুল্লী হলেন, যার নামাজের মাধ্যমে তিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হন। এই শ্রেণির মুসল্লীরা নামাজের রোকন ওয়াজিব এবং শর্ত ও খুশু (মনযোগ) পূর্ণরূপে পালনের পাশাপাশি আল্লাহকে হাজির জেনে ইবাদত করেন।
চতুর্থ প্রকার মুসল্লীর সাথে এই প্রকার মুসল্লীর ব্যবধান এখানে। তাদের খুশু থাকে কিন্তু ‘যেন আল্লাহকে দেখছেন’ সেই ধ্যান ও কল্পনা নিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন না। পক্ষান্তরে শেষ প্রকারের মুসল্লী অন্যসব যথাযথভাবে পালনের সাথে সাথে আল্লাহকে ‘সম্মুখে জেনে’ ইবাদত করেন। আর সে কারণে তাদের নামাজ আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয়। সূত্র: ইবনে ক্বাইয়িম আল জাওযিয়া রচিত আল ওয়াবিলুস ছায়্যিব