বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃত্যু পুলিশ-জনতার মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ
সুজন কৈরী : রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় লাইলী বেগম (২৫) নামে এক গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সকালে বনশ্রীর জি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসা থেকে পুলিশ ওই গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। তবে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাইলীকে হত্যা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বাসার মালিক মুন্সী মইনুদ্দিন ও দারোয়ান করিমকে আটক করেছে।
জানা গেছে, ওই বাড়িটির মালিক মইনুদ্দিন। তার স্ত্রী শাহনাজ বেগমসহ মেয়ের জামাই নিয়ে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকেন। ৭ তলা বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়ারা থাকেন।
এদিকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল দুপুরের দিকে পার্শ্ববর্তী লালমিয়ার গলি ও হিন্দুপাড়ার কাজের বুয়াসহ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশ হ্যান্ডমাইক দিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানালে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উত্তাল হয়ে উঠে বনশ্রী। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাস্তায় দাঁড় করানো একটি প্রাইভেটকারে আগুন ও একটি পিকআপ ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ালশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
নিহত লাইলীর স্বজন শাহনাজ বেগম বলেন, শুক্রবার সকালে লাইলীকে দারোয়ান দিয়ে ডেকে নেয় মইনুদ্দিন। এর কিছুক্ষণ পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই লাইলী মারা যায়।
লাইলীর আরেক স্বজন আফরোজা জানান, লাইলীর গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির কাশিপুরে। লাইলীর স্বামী নজরুল ইসলাম। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মেরাদিয়া হিন্দুপাড়ায় থাকতেন এবং বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকমীর কাজ করতেন। মইনুদ্দিনের বাসায় প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছিলেন লাইলী। কাজের সুবাদে তার কিছু টাকা বকেয়া ছিল। শুক্রবার সকালে সেই পাওনা টাকা চাইলে গেলে বাসার মালিক মইনুদ্দিন তাকে গলাটিপে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলিয়ে রাখেন। পরে কাউকে কিছু না জানিয়ে লাইলীকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
তবে গৃহকর্তা মঈনুদ্দিন জানান, লাইলী তার বাসায় প্রতিদিন সকালে কাজ করতে আসে। শুক্রবার সকালে বাসায় কাজ করতে এসেই বাসার একটি কক্ষের ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় বাড়ির ম্যানেজার টিপুকে খবর দেয়া হয়। ম্যানেজার এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাইলীকে দেখতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠালে সেখানকার চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, লাইলীর গলায় কালো দাগ ছিল। শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহকর্তা মইনউদ্দিন ও বাড়ির দারোয়ানকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তসহ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন