জাতির জনকের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ এবং দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ
নূহ-উল-আলম লেনিন
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাভাবিক বিকাশ এবং অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হয়েছে। ১৯৭৫-১৯৯৬ সালÑ এই ২১ বছর আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছু অপচয় হয়েছে। এই ২১টি বছর যদি বঙ্গবন্ধু এবং তার অনুসরণকারীরা দেশ চালাতে পারত তাহলে দেশের চেহারা অন্য রকম থাকত। গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশের যে জিডিপি ছিল সেটি মালয়েশিয়ার জিডিপির সমান। কিন্তু মালোয়শিয়া আমাদের থেকে এখন অনেক এগিয়ে গেছে। সম্পদ সৃষ্টির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে ছিলাম না। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যা একটু বেশি ছিল, কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কম হওয়ায় আমরা একটু পিছিয়ে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যদি জীবিত থাকতেন তাহলে তার যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ছিল সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকত, তাহলে বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারত। বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, সেটি ব্যাহত হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং আকাক্সক্ষা ছিল, তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দুটো লক্ষ্য ছিল এক. বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। যেটি তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বাঙালিরা পেয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র। দুই. এ দেশের মানুষ যেন শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির সমস্যা থেকে মুক্তি পায় সেটা চেয়েছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা লোকের সংখ্যা আগে ৬৮%। সেটা এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৬-৭ শতাংশের নিচে আনতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশকে এখন অগ্রগতির দেশ বলা হয়। এখানে এখন মানুষ আর না খেয়ে থাকে না। উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু জেলা রংপুর, দিনাজপুর মঙ্গা এলাকা বলা হতো। কারণ ওই সব এলাকায় দুর্ভিক্ষ হয়, মানুষ না খেয়ে থাকে, খাদ্যাভাবে মারা যায় ইত্যাদি। আমার ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অভিধান থেকে মঙ্গা শব্দটি উঠে যাবে।বঙ্গবন্ধু একটা কথা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির কোনো সম্মান থাকে না। কারণ তখন বাংলাদেশের যে উন্নয়ন বাজেট, সেটি বিদেশের উপর অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। এ বছর হাওরাঞ্চলের বন্যার ফলে খাদ্য বিনষ্ট হয়েছিল। এতে ওই এলাকা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাংলাদেশও অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাতীয় বাজেটের ৮৫% এখন আমাদের নিজেদের টাকায় বাস্তবায়ন হয়। আগে যেখানে ৮৫% বিদেশের উপর নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পদ্মা সেতু প্রকল্প। এখানে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। এই প্রজেক্ট নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ করেছিল, আমরা বিদেশের সাহায্য না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। এটা দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক উচ্চতায় চলে গেছে। আমরা এখন পারি। আমরা বিদেশিদের নিয়োগ দিচ্ছি কিন্তু সেটা আমাদের নিজেদের টাকা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা ভাবতেন। মেয়েরা ঘরে ঘরে শিক্ষিত হবে। এখন বাংলাদেশের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে দেখা যাবে, নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। এখন সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে রাজনীতি, বিচারপতি, সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ প্রভৃতি স্থানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এই নারীরা। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় থাকার কারণে। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাই মিলে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবই। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, কোনোভাবেই এদেশের কল্যাণ, অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না।
পরিচিতি: লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ