আদিবাসী দিবস : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
সৈয়দ রশিদ আলম
৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা হয়। কিন্তু সারা পৃথিবীতে আমরা যেদিকেই দৃষ্টি দিই সেখানেই আদিবাসীদের কান্না ও নির্যাতনের ঘটনা দেখতে পাই। সারা পৃথিবীতে আদিবাসীদের অবহেলার চোখে দেখা হয়। এই আদিবাসীরাই সারা পৃথিবীর অরণ্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। যে কারণে তাদেরকে প্রকৃতির সন্তান বলা হয়। কখনো বলা হয় অরণ্যের সন্তান। যেখানে অরণ্য নেই, প্রকৃতি নেই সেখানে আদিবাসীরাও নেই। সভ্য দেশ বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি আদিবাসীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিয়েছে। সেখানে সাদা চামড়ার মানুষ ছাড়া আদিবাসীদের চিরদিনের জন্য উৎখাত করা হয়েছে। তাদের ধারণা ছিল, আদিবাসীরা হিংস্র প্রকৃতির। কিন্তু তারা নিজেরাই সর্বোচ্চ হিংস্রতা আদিবাসীদের উপর প্রয়োগ করেছেন। তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য নিজেদের বস্তি তৈরি করেছেন। এরাই ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করেন।
আদিবাসীদের জন্য লোক দেখানো মায়াকান্না দেখান। কিন্তু বিশ্ব বিবেক জানেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আদিবাসীদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। সারা পৃথিবীতে নির্যাতিত অরণ্যের সন্তান আদিবাসীদের উপর প্রতিদিন অত্যাচার হচ্ছে। আদিবাসী বলেও আমরা মনে করি এমন একটি সম্প্রদায় যারা আমাদের আপন নন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আদিবাসীরাই আমাদের প্রকৃত বন্ধু, প্রকৃতির বন্ধু। আদিবাসীরা যদি থাকেন তাহলে প্রকৃতি থাকবে, অরণ্য থাকবে, অরণ্যের সন্তান প্রাণীকূল বেঁচে থাকবে। সারা পৃথিবীর যেটুকু অরণ্য বেঁচে আছে তার কৃতিত্ব আদিবাসীদের। তারা অরণ্যকে প্রকৃতিকে তাদের মায়ের মতো মর্যাদা দিয়ে থাকেন। যে কারণে তাদের দ্বারা অরণ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। একসময় এই বাংলাদেশে অরণ্য বেঁচে ছিল, প্রাণীকূলের অস্তিত্ব ছিল, ছিল তখন আদিবাসীদের অস্তিত্ব। এখন বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
প্রতিদিন আদিবাসীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের ভিটেহারা করা হচ্ছে। তাদের লাগানো গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। যারাই আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলছেন তাদেরকেই নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী বাংলাদেশে সব আদিবাসীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখবেন। আমাদের সরকার তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। অরণ্য বেঁচে থাক, অরণ্যের সন্তান আদিবাসীরা বেঁচে থাক। আদিবাসীরা বেঁচে থাকা মানে প্রকৃতি বেঁচে থাকা। প্রকৃতি বেঁচে থাকা মানে পৃথিবী বেঁচে থাকা।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান