যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট
মাহফুজ আবেদ
আল্লাহতায়ালার প্রতি ভরসা ছাড়া কোনো বান্দা কোনো মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারেন না। আল্লাহ ওপর ভরসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর তাওহিদের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় ও গভীর হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, আর ভরসা করো সেই জীবিত সত্ত্বার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। (সূরা ফুরকান: ৫৮)
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.) কে তার ওপর ভরসা করার আদেশ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজেকে পেশ করবেন না। কেননা তিনি চিরঞ্জীব, তার মৃত্যু নেই। তিনি পরাক্রমশালী, কোনো কিছুই তাকে পরাজিত করতে পারে না। যে ব্যক্তি তার ওপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন- তাকে সাহায্য ও সমর্থন করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ওপর ভরসা করবে, সে তো এমন কিছুর ওপর ভরসা করলো- যে মৃত্যুবরণ করবে, বিলীন ও ক্ষয় হয়ে যাবে। দুর্বলতা ও অপারগতা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছে। এ কারণে তার প্রতি ভরসাকারীর আবেদন বিনষ্ট হয়ে যায়, সে হয়ে যায় দিশেহারা।
এ থেকেই বুঝা যায় আল্লাহর ওপর ভরসা করার ফজিলত ও মর্যাদা কি? তার সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ককে গভীর করার গুরুত্ব কতটুকু?
তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা করার অর্থ হলো- দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয়ের কল্যাণ লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সঠিকভাবে অন্তর থেকে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। বান্দা তার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর ওপর সোপর্দ করবে। ঈমানে এই দৃঢ়তা আনবে যে, দান করা না করা, উপকার-অপকার একমাত্র তিনি ছাড়া আর কারো অধিকারে নেই।
মুমিন বান্দাদেরকে তাওয়াক্কুলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেমন- ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর ওপরেই ভরসা করো। (সূরা মায়েদা: ২৩)
হাদিসেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিজিক দান করতেন, যেমন পাখিকে রিজিক দান করে থাকেন। যারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে রাতে ফিরে আসে। (আহমাদ ও তিরমিজি)
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর ওপর ভরসার সঙ্গে আবশ্যক হলো- জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর মুমিনরা যেন আল্লাহর ওপরই ভরসা করে। (সূরা মায়েদা: ১১)
এখানে ভরসা করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তা নির্দেশিত যাবতীয় বিষয়ের উপকরণকে শামিল করছে। সুতরাং নির্দেশিত উপকরণ অবলম্বন না করে বা কাজ না করে শুধু ভরসা করে বসে থাকা বিরাট ধরণের অপারগতা- যদিও এতে তাওয়াক্কুল পাওয়া যায়। সুতরাং কোনো মানুষের জন্য উচিত নয়, ভরসাকে অপারগতায় রূপান্তরিত করবে অথবা অপারগতাকে ভরসায় রূপান্তরিত করবে। বরং যে সমস্ত উপকরণ সে অবলম্বন করবে তার মধ্যে ভরসাও শামিল থাকবে।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, সে অকল্পনীয়ভাবে তার মর্যাদা লাভ করবে, তার ফলাফল ভোগ করবে। আর সে হবে সর্বাধিক উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষ, সবচাইতে সুখি মানুষ। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। (সূরা ত্বালাক: ৩)