ডা. জাকির হোসেন
স্রষ্টার বড় দান হলো ঘুম। পরিমিত ঘুম না হওয়াকে অনিদ্রা বা মেডিকেলের ভাষায় ইনসোমনিয়া (ওহংড়সহরধ) বলে। আমাদের শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম (ঈরৎপধফরধহ ৎযুঃযস) বলে একটি চক্র আছে। অনেকে এটিকে বায়োলজিক্যাল ক্লক হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকে। এই ক্লক আমাদের ঘুমের এবং খাবার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই চক্র গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই চক্র অনেক বাহ্যিক উৎপাদক যেমন তাপমাত্রা এবং সূর্যরশ্মি দ্বারা খুব বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়। যার ফলে আমদের নির্দিষ্ট সময় পরে দুচোখে ঘুম চলে আসে। ঘুম আসলে সঠিক ঘুমের কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু হরমোন এবং অন্যান্য আরও কিছু এন্ডোজেনাস উপাদান আমাদের রক্তে নিঃসৃত হতে থাকে।
এই সকল উপাদান খুব অল্প পরিমাণে নিঃসৃত হলেও এগুলো সময়মতো এবং পরিমাণ মতো রক্তে না এলে এগুলোর অভাবে খুব বড় আকারে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যঘাত ঘটে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে একবারেই ওয়াকিবহাল নয়। যুগের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনে দিনে জীবন আরও বেশি গতিময় হয়ে পড়ছে। সেই গতি হয়তো মানুষকে আর্থিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করছে, কিন্তু শারীরিকভাবে মানুষ ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই চরম সত্যটি সকলে কে উপলব্ধি করে প্রতিটি মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের প্রয়োজন সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। সারাদিনের কাজ, খাওয়া ঠিক থাকলেও ঘুমকে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দিই না। সুস্থ জীবনের জন্য দরকারি ঘুমকে সবচেয়ে অবহেলা করা হয়। শরীরে রোগ বাসা বাঁধার আগেই ঘুম না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ঘুম না হওয়ার হাজারো কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব থেকে শুরু করে শারীরিক অনেক রোগও অনিদ্রার জন্য দায়ী। অনিদ্রার কারণ যাই হোক এমনকি পারিবারিক কারণ হলেও আপনি চিকিৎসকের কাছে সময় নিয়ে আপনার সমস্যার কথাগুলো খুলে বলেন। চিকিৎসক আপনার পারিবারিক সমস্যা দূর না করতে পারলেও আপনাকে অনেক উপদেশ দিয়ে উৎসাহিত করে কিছুটাও হলে অশান্তির কারণ হতে দূরে সরিয়ে আনতে পারবেন। অনিদ্রার কারণে আজকাল নন কমিনিকেবল (ঘড়হ পড়সসঁহরপধনষব) রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। এই সকল রোগ অল্প বয়সেই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ। এই সকল রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ হাইপারটেনশন, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রবণতা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক এবং শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি অনিদ্রার কারণে এই সকল রোগ আপনার দেহে বাসা বাঁধলে আমৃত্যু পর্যন্ত জীবনে অভিশাপ হিসেবে বয়ে বেড়াতে হবে। নিজেকে সুস্থ রাখার স্বার্থেই দেহের যতœ নিন, পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, আর অনিদ্রায় আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান